মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, টাইমস ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইউক্রেন বিষয়ক প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কিথ কেলোগ বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে দুই ভাগ করা যেতে পারে, যেমনটা করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানিকে।
কেলগ ইউক্রেনকে দুটি অঞ্চলে বিভক্তর করার জন্য প্রস্তাব করেছেন। তার মতে, দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম অংশ ব্রিটিশ এবং ফরাসি শান্তিরক্ষী বাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলসহ পূর্ব ইউক্রেন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, দুই অংশের মধ্যে ১৮ মাইল প্রশস্ত একটি অসামরিক অঞ্চল বা নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল তৈরি করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি জোর দিয়ে বলেছেন, আমেরিকা এই অঞ্চলগুলোতে কোনও স্থল সেনা পাঠাবে না, তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে, পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অংশে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ মেনে নিলে কিয়েভে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
এই পরিকল্পনা খোদ রিপাবলিকান পার্টি এবং মার্কিন মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এই প্রস্তাবের মানে হলো রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়া এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করা। কিছু মার্কিন কর্মকর্তাও ইউক্রেনের ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে সামঞ্জস্যের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কেলগ তার রুশ-বিরোধী অবস্থানের কারণে সমাদৃত হলেও ইউক্রেনের সাথে নাৎসি জার্মানির তুলনা এবং দেশ ভাগের প্রস্তাব ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই পরিকল্পনাকে রুশ দাবি মেনে নেওয়ার লক্ষণ এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে, রাশিয়ার সাথে আলোচনায় কেলগের কোনও ভূমিকা থাকবে না এবং তিনি কেবল ইউক্রেনের জন্য একজন বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। রাশিয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করার পর এবং ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেলগ এর আগে ইউক্রেন সফর করে সেদেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করেছিলেন।
কেউ কেউ ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য কেলগ পরিকল্পনাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে কেউ কেউ সতর্ক করে বলছেন যে, এই ধরনের পরিকল্পনা রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের বৈধতাকে আরও জোরদার করতে পারে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি পশ্চিমাদের উদাসীনতা এবং রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটো সম্প্রসারণের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ হয়। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ উপেক্ষা করার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনের উপর সামরিক আক্রমণ শুরু করে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায়, পশ্চিমা দেশগুলো ইতিমধ্যেই মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং কিয়েভে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য বারবারই তার শর্তগুলো পুনর্ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদান থেকে ইউক্রেনের বিরত থাকা, মস্কোর বিরুদ্ধে সমস্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং দোনবাস ও নভোরোসিয়া অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা।#
342/
Your Comment