১৪ এপ্রিল ২০২৫ - ২০:৪১
Source: Parstoday
লোহিত সাগরে মার্কিন সামরিক শক্তির ব্যর্থতার প্রধান কারণ ইয়েমেনের সমর কৌশল

লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর পাল্টা সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকা এবং তাদের মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অক্ষমতা থেকে বোঝা যায় সামুদ্রিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে এবং তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।

ইসনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আমেরিকান গণমাধ্যম "ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট" লিখেছে: মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা এবং তাদের ওপর অতিরিক্ত প্রেসারকে বুদ্ধিমত্ত্বার সাথে কাজে লাগিয়ে, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ বাহিনী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে।

ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের মতে, মার্কিন নৌবাহিনী এবং তার মিত্রদের ব্যাপক হামলা সত্ত্বেও ইয়েমেনি সেনাবাহিনী লোহিত সাগরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রায় ২ বছর ধরে এই কৌশলগত জলপথটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ জাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপের চারপাশে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

নৌযুদ্ধের নতুন যুগে, জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং ড্রোন ইয়েমেনি সেনাবাহিনীকে কৌশলগত বাব আল-মান্দাব প্রণালী বন্ধ করতে সাহায্য করেছে।

এই অচলাবস্থা শক্তিশালী সামুদ্রিক শক্তির অধিকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ড্রোন এবং ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এখন শত শত এমনকি হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

লোহিত সাগরে আনসারুল্লাহর পাল্টা আক্রমণ ও প্রতিরোধের কারণে মার্কিন নৌবাহিনী প্রচণ্ড সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায়ও তারা দেখছে না।

মার্কিন নৌবাহিনীর উন্নত ও ব্যয়বহুল বিমানবাহী রণতরী এবং জাহাজগুলো এই ধরণের যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত নয় এবং নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মার্কিন নৌবাহিনীর ঘোষিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ সমর শক্তি এনে জড়ো করেছে। হুথিদের আক্রমণ থেকে যুদ্ধজাহাজ এবং বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন নৌবাহিনীকে লোহিত সাগর অঞ্চলে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠাতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এতো শক্তিশালী নৌ উপস্থিতি সত্ত্বেও, সমুদ্রপথটি এখনও অবরুদ্ধ।

অন্যদিকে, চীনের হুমকিসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোও বহাল রয়েছে। চীনের ৪০০ টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ থাকলেও মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরে মাত্র ২০০টি জাহাজ রয়েছে।

আমেরিকার পুরাতন শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ অবকাঠামোর কারণে সংখ্যার দিক থেকে তার নৌবাহিনী চীনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো তার মিত্রদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্যও প্রস্তুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

এছাড়াও, মার্কিন নৌবাহিনীকে ইরানের মোকাবিলা করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। এই বছরের শুরুর দিকে, বাহিনী ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে ইসরাইলকে রক্ষায় ভূমিকা পালন করেছিল, একই সাথে লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর সাথেও লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে, আনসারুল্লাহর পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে এবং ঘন ঘন হুমকি মোকাবেলায় লোহিত সাগরে মার্কিন বাহিনীর স্থায়ী এবং ব্যয়বহুল উপস্থিতি তাদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।

এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অভিযান বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত বিমান মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে B2 বোমারু বিমান। কিন্তু এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে শুধুমাত্র বিমান শক্তির উপর নির্ভর করলেই কোন সিদ্ধান্তমূলক ফলাফল পাওয়া যাবে।#

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha