১২ মে ২০২৫ - ২৩:০৩
Source: Parstoday
ইরান ও আরব বিশ্বের মধ্যে সুসম্পর্ক ইসলামী সভ্যতা ও বিশ্বের জন্য মূল্যবান সাফল্য বয়ে এনেছে: আরাকচি

পার্সটুডে-ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন এবং ব্যবহার হারাম বলে মনে করে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ ব্যবস্থার অঙ্গিকারাবদ্ধ সদস্যও।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি শনিবার রাতে চতুর্থ 'ইরান-আরব সংলাপ সম্মেলনে' বলেন: নিঃসন্দেহে, ইতিহাসজুড়ে ইরান এবং আরব বিশ্বের মধ্যে সুসম্পর্ক মহান ইসলামী সভ্যতার কাঠামোর মধ্যে সমগ্র বিশ্বের জন্য মূল্যবান সাফল্য বয়ে এনেছে, যা এখন সাধারণ ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে বিবেচিত এবং আমাদের জন্য গর্বের উৎস। পার্সটুডে আরও জানায়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই সংলাপের নীতিতে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করে।

আরাকচি আরও বলেন: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে, আমরা আঞ্চলিক ঐকমত্য অর্জনের ওপর জোর দিচ্ছি। গত এক বছরে, আমরা পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে অনেক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি। সমস্ত তিক্ততা সত্ত্বেও এইসব উন্নয়ন এ অঞ্চলের দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং হুমকি মোকাবেলায় তাদের একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর পথ সুগম করেছে।

এ অঞ্চলের শান্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হলো ইহুদিবাদীদের উপস্থিতি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন: আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের মিলগুলো আমাদের মতবিরোধের বিষয়গুলোর চেয়ে অনেক বেশি, যার বেশিরভাগই বানোয়াট এবং অবশ্যই বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আজ আমরা ইসলামী বিশ্বের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কথা বলতে সক্ষম নই। একইসাথে চলমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তার প্রতি চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। ইহুদিবাদীদের উপস্থিতি এ অঞ্চলে শান্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকি। অথচ আমেরিকা এই ইহুদিবাদীকে সমর্থন দিয়ে নিজেদেরকেও ওই দখলদারদের অপরাধের সহযোগী এবং অংশীদার বানিয়ে নিয়েছে।

আরাকচি বলেন: এই আগ্রাসনের মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইলের লক্ষ্য হলো মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করা, দুর্বল করা এবং হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোর যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করা। আরাকচি আরও বলেন: এই মন্দ কাজগুলোর মোকাবিলা করা এ অঞ্চলের সকল দেশের আইনি এবং নৈতিক কর্তব্য। তাই আলোচনামূলক রূপান্তরের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময়, পর্যটন এবং বাণিজ্যের মতো ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি একটি শক্তিশালী অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে, একটি শক্তিশালী দেশের ওপর নয়। এই বৈঠকটি সংঘর্ষের পরিবর্তে বোঝাপড়াকে প্রতিস্থাপন করার একটি পদক্ষেপ এবং এই বোঝাপড়ার বিষয়টিকে অবশ্যই বিকশিত করতে হবে। 

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি এবং ব্যবহারকে হারাম মনে করে

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চতুর্থ দফা পরোক্ষ আলোচনার কথা উল্লেখ করে আব্বাস আরাকচি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তরি এবং ব্যবহার করাকে হারাম বলে মনে করে। ইরান সর্বদা আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সদস্য। তবে সেইসঙ্গে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকারের ওপর জোর দেয়। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাচ্ছি না এবং ইরানের প্রতিরক্ষা নীতিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কোনও স্থান নেই। এ কারণেই আমরা পশ্চিম এশিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল তৈরির পথিকৃৎদের একজন ছিলাম। আমরা মার্কিন সরকারের সাথে এমনকি ইউরোপ, রাশিয়া ও চীনের সাথেও সরল বিশ্বাসে আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: পশ্চিমা দেশগুলোসহ যারা পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করে বলে দাবি করে, তাদের সকলের উচিত দ্বিমুখী নীতি থেকে বিরত থাকা। তারা একদিকে ইরান এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার দাবি করছে। অপরদিকে একটি দখলদার, আগ্রাসী ও গণহত্যাকারী সরকারকে বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সাহায্য করে যাচ্ছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র গর্বিত ইরানি জাতির অধিকার থেকে পিছপা হবে না

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্পূর্ণরূপে সম্ভব কিন্তু যদি লক্ষ্য হয় ইরানকে তার পারমাণবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং অন্যান্য অবাস্তব ও অযৌক্তিক দাবি চাপিয়ে দেওয়া, তাহলে আমাকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কোনওভাবেই গর্বিত ইরানি জাতির কোনও অধিকার থেকে পিছপা হবে না।#

Your Comment

You are replying to: .
captcha