১৪ মে ২০২৫ - ২১:১৮
Source: IQNA
নারী-পুরুষের পোশাক ডিজাইনে ইসলামের নির্দেশনা

বর্তমানে তরুণ বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় একটি পোশাক টি-শার্ট। একসময় এটি পোশাকের নিচে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পোশাক। মানুষের রুচির পরিবর্তন আসায় এক শ্রেণির ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পোশাক। স্বয়ংসম্পূর্ণ পোশাক হয়ে ওঠায় এর ডিজাইনেও এসেছে নান্দনিকতা।

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং জগতে টি-শার্ট ডিজাইন বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছে। প্রতিটি ব্র্যান্ড ও ডিজাইনার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন নতুন ও আধুনিক ডিজাইনের টি-শার্ট উপহার দিতে। কারণ টি-শার্ট ও এর ডিজাইন পরিধানকারীর ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। টি-শার্টের রং, ডিজাইন, টাইপোগ্রাফি বহু অর্থ বহন করে।

তাই মুমিনের উচিত, টি-শার্ট ডিজাইন ও টি-শার্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া। কারণ ক্ষেত্র বিশেষে পোশাকও মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পোশাকেও রয়েছে ঈমান ও কুফরের ছাপ।

নিম্নে টি-শার্ট ডিজাইনে ব্যবহৃদ স্টাইল ও তার শরয়ি বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো—

অ্যাবস্ট্রাক্ট (Abstract) :  বিমূর্ত রং, আকার ও রেখা দিয়ে তৈরি ডিজাইন; বিষয়বস্তু নয়, রং ও কম্পোজিশনই মুখ্য।

সাধারণত শিল্পানুরাগী তরুণ-তরুণী, ডিজাইনাররা এ ধরনের টি-শার্ট পছন্দ করেন। এসব ডিজাইনে ব্যবহৃত রং যদি অনেক অনৈসলামিক চিহ্ন বহনকারী ব্র্যান্ড কালার প্রমোট না করে (যেমন, সাত রং দিয়ে এলজিবিটি বোঝায়) তাহলে তা ব্যবহারে হারাম কিছু নেই।

তবে পুরুষের জন্য নারীদের সাদৃশ হয় এমন গাঢ় রঙের পোশাক ব্যবহার করা নিষেধ। যেমন—তাদের জন্য গাঢ় লাল রঙের পোশাক পরিধান করা মাকরুহ। তবে হালকা লাল রঙের পোশাক পরিধান করা বৈধ।

(রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৫৮, কাশফুল বারি : কিতাবুল লেবাস : ২০৯)

এনিম্যাল (Animal) : বিভিন্ন প্রাণী যেমন—বিড়াল, কুকুর, পাখি, ডাইনোসরসহ নানা প্রাণীর চিত্র। কখনো সরাসরি প্রাণীর অবয়ব হয়, আবার কখনো শেপ আকারে হয়। সাধারণত পোষাপ্রেমী, শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে এসব পোশাক ডিজাইন ও তৈরি করা হয়। অথচ প্রাণীর ছবি তৈরি ও ব্যবহারের ব্যাপারে হাদিসে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা এসেছে : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একদিন রাসুলে করিম (সা.) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পর্দা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আঁকা ছিল। তিনি দেখামাত্র পর্দাটি ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হবে সেসব লোককে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে কিছু তৈরি করে। আয়েশা (রা.)  বললেন, আমি ওই পর্দা কেটে একটি বা দুটি বালিশ তৈরি করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৯৮)

গেমার ও টিনএজারদের টার্গেট করে তৈরি জাপানি এনিমেশন বা মাঙ্গা চরিত্রভিত্তিক এনিমে স্টাইল ডিজাইন, কার্টুন, ফ্যান্টাসি বা কাল্পনিক চরিত্রসমৃদ্ধ ক্যারেক্টার ডিজাইন, কমিক ও সরাসরি মানুষের ছবিসংবলিত ডিজাইন ব্যবহারের বিধানও একই রকম।

ফুড অ্যান্ড ড্রিংক (Food & Drink) : এগুলোতে খাবারের পাশাপাশি হারাম কিছু না থাকলে নাজায়েজ বলা না গেলেও মোটামুটি পরিণত মানুষের জন্য এ ধরনের ডিজাইনসংবলিত পোশাক বেমানান।

জিওমেট্রিক (Geometric) : অনেকে আবার  ত্রিভুজ, বৃত্ত, রেখা ইত্যাদি জ্যামিতিক রূপের নকশাসংবলিত টি-শার্ট ডিজাইন করে এবং ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে যদি তাতে কোনো ইলুমিনাতি বা অনৈসলামিক সাইনের প্রতি ইঙ্গিত করে এমন কিছু না থাকে, তবে তা ব্যবহার নাজায়েজ হবে না ইনশাআল্লাহ।

স্ট্রিট আর্ট (Street Art) :  স্ট্রিট ফ্যাশন লাভার, গ্রাফিতিপ্রেমী, তরুণদের টার্গেট করে তৈরি এই ক্যাটাগরির ডিজাইনে গ্রাফিতি, আরবান আর্ট ও রোড আর্টভিত্তিক শিল্প ফুটিয়ে তোলা হয়। যার মধ্যে অনেক সময় শয়তানের অবয়ব, মানুষের মাথার খুলি, উদ্ভত টাইফোগ্রাফি, অশ্লীল অবয়বের ছাপ থাকে। তাই মুমিনের জন্য এ ধরনের ডিজাইন করা ও পরিধান করা নিষেধ।

মিউজিক (Music) : বাদ্যযন্ত্র, গান, সাউন্ডওয়েভ বা ব্যান্ড লোগোসংবলিত ডিজাইন— এগুলো সরাসরি প্রাণীর ছবি না হলেও পরোক্ষভাবে হারাম বিনোদনের প্রতি উৎসাহ দেয়। পাশাপাশি অমুসলিম কালচারকে প্রমোট করে। তাই এগুলোও বর্জনীয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)

টাইপোগ্রাফি (Typography) : মেসেজ ভিত্তিক ফ্যাশনপ্রেমী, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট, স্টাইলিশ লেখাপ্রেমীদের টার্গেট করে তৈরি এই ডিজাইন ক্যাটাগরিতে নান্দনিক অক্ষরের লেখার মাধ্যমে মেসেজ দেওয়া হয়, সেখানে কারো উক্তি, নাম, সংখ্যাও থাকতে পারে। এ ধরনের ডিজাইনে যদি অনৈসলামিক ও অশ্লীল কোনো বার্তা দেয়-এমন কিছু না থাকে, তাহলে তা পরিধানে সমস্যা নেই। তবে ইদানীং দেখা যায়, উঠতি বয়সীদের টি-শার্টে টাইফোগ্রাফি আকারে এমন কিছু অশ্লীল বার্তা লেখা থাকে, যা সমাজে নোংরা বার্তা পৌঁছায়। নিছক কৌতুকের জন্য এ ধরনের ডিজাইন তৈরি ও টি-শার্ট ব্যবহার করা হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এটি মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। (সুরা নুর, আয়াত : ১৯)

ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) : এটা টাইফোগ্রাফিরই একটা শাখা। বিধানও একই। তবে ইসলামমনস্কদের মাঝে ইদানীং আরবি টাইফোগ্রাফিসংবলিত টি-শার্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ ধরনের টি-শার্টের বিধান হলো, এখানে পবিত্র কোরআনের আয়াত, হাদিস, আল্লাহর নাম, নবী-রাসুলদের নামের মতো পবিত্র ও সম্মানিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা পোশাক পরে মানুষ টয়লেটসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকে, তাই এমন কোনো জিনিস ডিজাইনে ব্যবহার করলে এর সম্মানহানি হবে। (ফাতওয়ায়ে শামি : ৬/৩৬১)

ভিন্টেজ (Vintage) : পুরনো স্কুলের ফ্যাশন, ক্লাসিক ব্র্যান্ড/লোগো ব্যবহার করে এসব ডিজাইনে যদি অনৈসলামিক কোনো চিহ্ন ব্যবহৃত না হয়, তাহলে জায়েজ হবে, অন্যথায় মুসলমানদের উচিত এ ধরনের পোশাক এড়িয়ে চলা।

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha