১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৩:৩১
তিউনিসিয়ায় গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহরে বিস্ফোরণের অভিযোগ

গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্টদের একটি বহর। তাদের দাবি, বহরের একটি নৌকায় তিউনিসিয়ায় অবস্থানকালে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের সংগঠন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পর্তুগিজ পতাকাবাহী “ফ্যামিলি বোট” নামের নৌযানটিকে ড্রোন আঘাত করে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি। সংগঠনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, একটি আলোর ঝলক নৌকাটির উপর পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়।



ফ্লোটিলা দলটি বুধবার তিউনিসিয়া থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবারই রাজধানী তিউনিসে সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায়, এই ঘটনায় তাদের গন্তব্য পরিবর্তন হবে না। সংগঠনটির লক্ষ্য গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, যা ইসরায়েলের নৌ অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

বিখ্যাত ব্যক্তিরা ছিলেন এ বহরে

ফ্যামিলি বোটেই ছিলেন ফ্লোটিলার সবচেয়ে আলোচিত যাত্রীরা, যার মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কোলাউ। তবে হামলার সময় তারা নৌকাটিতে ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পর্তুগিজ কর্মী মিগুয়েল দুয়ার্তে, যিনি ঘটনার সময় নৌকাটিতে উপস্থিত ছিলেন, তিউনিসে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিস্ফোরণের ঠিক আগে তিনি মাথার ওপরে কয়েক মিটার দূরত্বে একটি ড্রোন দেখতে পান।

তাঁর ভাষায়, “ড্রোনটি কিছুক্ষণ লাইফ জ্যাকেটগুলোর ওপর ভেসে থাকে এবং তারপর একটি বোমা ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে, আগুন ধরে যায়। আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে আগুন নেভাতে সক্ষম হই এবং সবাই নিরাপদে থাকি।”

তবে তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ড্রোন হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং এটি মূলত একটি লাইফ জ্যাকেটে আগুন লাগার ফল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল নীরব, তবে অভিযাত্রা চলবে

এ ঘটনার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন, এই আক্রমণ তাদের অভিযানকে থামাতে পারবে না।

সংগঠনটির আরেক সদস্য থিয়াগো অ্যাভিলা বলেন, “আমরা শুধু মিশন চালিয়ে যাচ্ছি না, বরং এই ঘটনার পর হাজারো মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে আসছে।”

এই ফ্লোটিলা গত সপ্তাহে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এবং ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করা। অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, চিকিৎসক, শিল্পী, ধর্মীয় নেতা এবং ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের উপস্থিতি ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে আরও জোরালো বার্তা দেবে।

তিন মাস আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে একটি ছোট ফ্লোটিলা গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। একই সময়ে উত্তর আফ্রিকা হয়ে স্থলপথে আসা আরেকটি কাফেলাকে মিসরপন্থী নিরাপত্তা বাহিনী লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে আটকে দেয়।


গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর এই উদ্যোগকে ইসরায়েল বরাবরই প্রচারণার অংশ বলে অবমূল্যায়ন করেছে। তবে অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র প্রতীকী নয়, বরং অবরুদ্ধ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব। তিউনিসিয়ার ঘটনাটি তাদের অভিযাত্রাকে কিছুটা আলোচনায় আনলেও, তাদের মূল লক্ষ্য অটল রয়েছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha