আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ নামের এই মিছিলে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার লোক উপস্থিত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনে চরম ডানপন্থিদের এটিই সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ও আশপাশের সড়কগুলোতে দুপুর গড়ানোর আগেই জমতে থাকে অভিবাসনবিরোধী জনতা। সাদা-কালো ব্যানার, ইংলিশ পতাকা, মার্কিন পতাকা, এমনকি ইসরাইলি পতাকাও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে। অনেকের মাথায় ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার প্রতীকী টুপি—‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।
সংগঠক টমি রবিনসন এই সমাবেশকে আখ্যা দেন “বাকস্বাধীনতার উৎসব” হিসেবে। তার বক্তৃতায় ছিল অভিবাসন সীমিত করার দাবি এবং সরকারের প্রতি চাপ বাড়ানোর আহ্বান।
এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ বক্তব্য দেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও। তিনি রবিনসনের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ইউরোপের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ওপর। তার উপস্থিতি ও বক্তব্যে সমাবেশের পরিবেশ আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, একই সময়ে কাছাকাছি এলাকায় সমবেত হয় ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ ব্যানারের অধীনে অভিবাসীবান্ধব সংগঠন ও প্রগতিশীল কমিউনিটিগুলো। তাদের মিছিলে অংশ নেয় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। স্লোগানে মুখরিত হয় রাস্তাগুলো—“বর্ণবাদ নিপাত যাক, অভিবাসীদের মর্যাদা চাই।”
এছাড়াও অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট সংগঠনগুলো আলাদা মিছিল করে। অনেক তরুণ-তরুণী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান যেখানে লেখা ছিল—“লন্ডন সবার শহর”, “এখানে বর্ণবাদের ঠাঁই নেই।” বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসনবিরোধী প্রবল ঢলের পাশাপাশি প্রগতিশীল শক্তিগুলোর ঐক্যও এই সময়ের একটি বড় বার্তা।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা একাধিকবার ব্যারিকেড ভেঙে পাল্টা মিছিলে পৌঁছাতে চেয়েছিল। এতে সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হন।
ওয়েস্টমিনস্টারের বিভিন্ন সড়কে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। পুলিশের উপস্থিতি ছিল অতিরিক্ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ইউনিটও।
অভিবাসনবিরোধী উত্তেজনার বিপরীতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে ছিল ভিন্ন চিত্র। সেখানে আয়োজিত হয় বিশাল বর্ণবাদবিরোধী র্যালি। ডকল্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় শত শত মানুষ অংশ নেন এই কর্মসূচিতে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা মিছিল থেকে বলেন—“ব্রিটেনে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই, অভিবাসীদের অবদান ব্রিটিশ সমাজের জন্য অপরিসীম।”
প্রতিবাদী স্লোগান, ঢোল, পোস্টার ও ব্যানারে মুখর হয়ে ওঠে টাওয়ার হ্যামলেটস। স্থানীয় তরুণরা জানান, তারা চান না লন্ডনের বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশ নষ্ট হোক। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীরা যে শ্রম, ব্যবসা ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন, সেটি অস্বীকার করা যাবে না।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডনের মতো বহুসাংস্কৃতিক শহরে এত বড় অভিবাসনবিরোধী সমাবেশ উদ্বেগজনক। এটি শুধু রাজনৈতিক চরমপন্থার উত্থানই নয়, বরং সমাজে বিভাজন বাড়ানোর এক বড় ইঙ্গিত।
তবে পাল্টা প্রতিরোধে অভিবাসীবান্ধব শক্তির সমাবেশ আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি ও অন্যান্য অভিবাসী কমিউনিটির দৃঢ় অবস্থান দেখাচ্ছে, লন্ডন এখনো বহুত্ববাদ ও সহাবস্থানের শহর হিসেবেই পরিচিত থাকতে চায়।
সর্বোপরি, ১৩ সেপ্টেম্বরের এই ঘটনাবলি লন্ডনের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—চরম ডানপন্থিরা যতই শক্তি প্রদর্শন করুক না কেন, অভিবাসীবান্ধব ও প্রগতিশীল সমাজের ঐক্য এখনও শক্তিশালী এবং তাদের কণ্ঠস্বর নীরব হওয়ার নয়।
Your Comment