আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসলামি মানবাধিকার কমিশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে জানিয়েছে, ইসলামভীতি বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কমিশন জোর দিয়ে বলেছে—মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বৈষম্য, অবিচার, গণমাধ্যমের পক্ষপাত এমনকি দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু নয় এমনকি তা কেবল বৈশ্বিক ঘটনার প্রভাব নয়, এগুলোর মূল রয়েছে ব্রিটেনের কাঠামোগত নীতি ও ব্যবস্থা।
ইসলামভীতি শুধু ব্রিটেনে নয়, বরং ইউরোপের বহু দেশে দশকজুড়ে এক প্রাতিষ্ঠানিক নীতিরূপে মুসলমানদের সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে এবং পশ্চিমা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তিকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলো—বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স—ইসলামকে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক হুমকি এবং মুসলমানদের “অবিশ্বস্ত” বা “বহিরাগত” হিসেবে উপস্থাপন করার নীতিকে জোরদার করেছে।
এদিকে, ইসলামভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে ব্রিটেনের বহু গণমাধ্যম মুসলমান ও ইসলাম সম্পর্কিত খবর প্রচার করতে গিয়ে পক্ষপাতমূলক ও বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে।
সত্য তুলে ধরার বদলে তারা প্রায়ই ভুল তথ্য ও বিকৃত প্রতিবেদন প্রচার করছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এবং এর পরিণতিতে বৈষম্য ও সহিংসতা বাড়ে। “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ” কিংবা কঠোর অভিবাসননীতি—এসব পশ্চিমা নীতি মুসলমানদের সঙ্গে অন্যান্য সমাজগোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনা আরও গভীর করেছে।
একই সময়ে যখন ব্রিটেন ও ইউরোপে ইসলামবিরোধী নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদেরকে স্বাধীনতা, সমতা ও মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে প্রচার করে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক সমতা ও গণতন্ত্রকে ইউরোপের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তি বলে দাবি করে।
অথচ ইসলামভীতির এই ব্যাপক বিস্তার তাদের সব দাবিকে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণ করে। এই দ্বিচারিতা শুধু মুসলমানদের মধ্যে নয় বরং অন্যান্য ধর্মের মানুষের মনেও দেশটির নীতি-আদর্শ নিয়ে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—ইসলামভীতি শুধু মুসলমানদের ক্ষতি করেনি; এটি পশ্চিমা সমাজের নৈতিক ও মানবিক ভিত্তিকেও বৈধতার সংকটে এবং স্বাধীনতা-সমতার প্রতীকী মূল্যবোধকে ভেঙে দিচ্ছে।
বর্তমানে পাশ্চাত্যে ইসলামভীতি আর গোপন কোনো নীতি নয়; বরং প্রকাশ্য রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে- এটি এমন এক হাতিয়ার যা স্বাধীনতা, সমতা ও মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করে পশ্চিমা নেতাদের আসল চেহারা উন্মোচিত করছে।
পাশ্চাত্য যদি ইসলামবিরোধী এই পথ থেকে ফিরে না আসে, তাহলে ইসলামভীতিই পশ্চিমা সভ্যতার মানবিক মূল্যবোধের পতনের সাক্ষ্য দিয়ে যাবে।
Your Comment