ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ২০১৭ সালে দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ফিলিস্তিনকে অশান্ত করেছে যা এক ঐতিহাসিক অঘটন। ব্লেয়ার এটা ফাঁস করেন যে তিনি ও বিশ্বের অন্য নেতারা দখলদার ইসরাইলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ভুল করেছেন। তারা নির্বাচনে হামাসের সুস্পষ্ট বিজয়ের পরই তড়িঘড়ি হামাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ঘোষণা করা সত্ত্বেও ব্লেয়ার ইসরাইলি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ওই নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও হামাসের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার ইসরাইলি প্রচার-অভিযানকে মেনে নেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইসরাইল-প্রীতি অব্যাহত রেখে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ জুনিয়র বুশও নব-নির্বাচিত হামাস সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ও নানা সহায়তা প্রদানও বন্ধ করে দেয়। ব্লেয়ার মার্কিন নীতির অন্ধ অনুসরণ করায় বুশের প্রশিক্ষিত কুকুর হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেন এবং যুদ্ধ-অপরাধী হিসেবেও কলঙ্কিত হন। ব্লেয়ার উপনিবেশবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলোর চাপিয়ে দেয়া শর্তগুলো মেনে নিতে ও গণতান্ত্রিক ইচ্ছা বিসর্জন দিতে ফিলিস্তিনের প্রতি দাম্ভিকতাপূর্ণ আহ্বান জানান। বুশ ও ব্লেয়ার এই বলে হামাসকে চাপ দিচ্ছিলেন যে হামাস যেন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় ও কথিত সহিংসতার পথ পরিহার করে এবং পিএলও ও ইসরাইলের মধ্যে অতীতে যেসব সমঝোতা হয়েছিল সেগুলো মেনে চলে।
একই সময়ে ইইউ বা ইউরোপীয় জোটও ঘোষণা করে যে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সহিংসতায় বিশ্বাসী কোনো দল বা ব্যক্তির স্থান নেই। মাসকে ক্ষমতাচ্যুত ও একঘরে করতে বুশ ও ব্লেয়ার তাদের সমমনা পিএলও নেতা মাহমুদ আব্বাসকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে তাকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেন। হামাসের দর্শনীয় বা ভূমিধস বিজয় সত্ত্বেও ইসরাইল ২০০৭ সাল থেকে গাজার ওপর কঠোর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গত ১৭ বছর ধরে একটানা সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞ, গ্রেফতার ও বোমা বর্ষণ চালানোর পাশাপাশি গাজায় প্রাথমিক জরুরি পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ইসরাইলের ওই নীতি জাতিগত নির্মূল অভিযান ছাড়া আর কিছুই ছিল না যা এখনও গাজায় অব্যাহত রেখেছে তেলআবিবের জালিম শাসকগোষ্ঠী।
গত এক বছরে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় শহীদ হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইল ও তার পশ্চিমা সহযোগীরা নিজ নিজ মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে এটা প্রচার করছে যে ৭ অক্টোবরের ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেছে যা প্রকাশ্য মিথ্যাচার।
পাশ্চাত্যের এই দ্বিমুখী নীতি নতুন কোনো ঘটনা নয়, এর শেকড় ১৯৪৮ সালে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপনিবেশবাদী প্রকল্পের গভীরে প্রোথিত। ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাসের দর্শনীয় বিজয় যারা দেখেছেন তারা হামাসের সঙ্গে অসহযোগিতার পশ্চিমা পদক্ষেপে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার গাজা ও পশ্চিম তীরের নির্বাচনকে পুরোপুরি ন্যায়নিষ্ঠ বা সঠিক বলে মন্তব্য করেছিলেন। অথচ গণতান্ত্রিক হওয়ার দাবিদার পাশ্চাত্য ফিলিস্তিনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের এই ফলাফলকে বানচালের চেষ্টা চালায়। তারা হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ভিত্তিহীন অপবাদ দেয়। ইসরাইল ও তার সহযোগীরা স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামকে অপরাধী তৎপরতা বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
ইহুদিবাদী প্রেশার-গ্রুপগুলোসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী গ্রুপগুলোও এই একই অপকৌশল প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদীদের বিপর্যয়ের শিক্ষার আলোকে বলা যায় পশ্চিমাদের এইসব প্রতারণাময় কৌশল বা ষড়যন্ত্রগুলোও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। #
342/