২১ এপ্রিল ২০২৫ - ২৩:০৬
Source: Parstoday
'আমেরিকা জানে যে ইরান বলপ্রয়োগের কাছে নতি স্বীকার করবে না'

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি এক সাক্ষাৎকারে ককেশাসে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে শান্তি চুক্তিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তেহরান ও মস্কোর সমন্বিত ভূমিকার উপর জোর দিয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যায় প্রচারিত রাশিয়া টুডে-র সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা,আঞ্চলিক বিষয় এবং রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্কের বিষয়ে তেহরানের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। পার্সটুডের আজকের প্রবন্ধে তার সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

ইরানরাশিয়া ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইরান, রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

উত্তর: বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইরান চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছি এবং বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এই আলোচনাগুলো চালিয়ে যেতে এবং অন্যান্য বিষয়ে এসব আলোচনা চালিয়ে নিতে প্রস্তুত। সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এই তিনটি দেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে এবং আমরা এই পথের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।

দক্ষিণ ককেশাসে ইরান ও রাশিয়ার ভূমিকা

প্রশ্ন: রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনায় আপনি কি ককেশাসের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন? এই অঞ্চলে ইরান ও রাশিয়া কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, ককেশাস সম্পর্কে সের্গেই ল্যাভরভের সাথে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই অঞ্চলে ইরান ও রাশিয়ার নীতি সমন্বিত এবং এ বিষয়ে আমরা এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা "3+3" উদ্যোগ চালু করেছি (আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরান, তুর্কিয়ে,রাশিয়া)। জর্জিয়ার এখনও কিছু সন্দেহ আছে, কিন্তু আমরা আশা করি এই সন্দেহগুলো দূর হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে ককেশাসের সমস্যাগুলো আঞ্চলিক দেশগুলোর উপস্থিতির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত এবং বিদেশী শক্তির উপস্থিতি ক্ষতিকারক। আমরা আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে শান্তি চুক্তিকে সমর্থন করি এবং আশা করি যে চুক্তি স্বাক্ষর করার ফলে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে অভূতপূর্ব সম্পর্ক

প্রশ্ন: ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?

উত্তর: তেহরান এবং মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক কখনও এত ঘনিষ্ঠ এবং শক্তিশালী ছিল না। আমাদের একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি রয়েছে যা সম্পর্ককে কৌশলগত স্তরে উন্নীত করে। বড় বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে এবং আমাদের বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞাগুলো কোনও বড় বাধা তৈরি করেনি কারণ আমরা নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমাদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া খুবই ঘনিষ্ঠ এবং বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমাদের একই অবস্থান রয়েছে, যদিও কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনার আগে আমার মস্কো সফর রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্বের প্রমাণ দেয়। আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের বন্ধুদের ভুলে যাই না এবং আমরা আমাদের অবস্থান সমন্বয় করি।

ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে রাশিয়ার ভূমিকা

প্রশ্ন: ইরানের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানে রাশিয়া কী ভূমিকা পালন করতে পারে?

উত্তর: রাশিয়া সর্বদাই পারমাণবিক সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং ইরানের পরমানু সমঝোতা পত্র জেসিপিওএ'র আলোচনায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে। মস্কো তার পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিয়ে এ সমঝোতা চুক্তিতে সহায়ক ছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার অবস্থান এবং ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে মস্কো ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনায় একটি ন্যায্য চুক্তিতে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। পুতিন এবং লাভরভের সাথে সাম্প্রতিক বৈঠকেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

হুমকির বিষয়ে ইরানের অবস্থান

প্রশ্ন: ইসরাইলের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে কি আমেরিকার সমর্থন ছাড়া ইরানে আক্রমণ করা সম্ভব?

উত্তর: ইসরাইল ইরানে আক্রমণ করতে সক্ষম নয় অতীতেও তারা সক্ষম হয় নি বর্তমানেও নয়, ভবিষ্যতেও তারা সক্ষম হবে না। এমনকি আমেরিকান সমর্থন থাকা সত্ত্বেও। আমাদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা আছে এবং ইসরাইল ও আমেরিকা আমাদের প্রতিক্রিয়ার শক্তি সম্পর্কে সচেতন। সামরিক হুমকি বাস্তবায়িত হবে না কারণ ইরান আত্মরক্ষায় খুবই সক্ষম। অন্যদের চাপ এবং হুমকির কারণে আমরা আমাদের মর্যাদা, সম্মান এবং স্বার্থের সাথে আপস করব না। আমার মনে হয় না সামরিক হুমকি বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছাবে। কারণ আমি মনে করি বিশ্ব আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, এবং আমেরিকানরা ইরানকে স্বীকৃতি দিয়েছে যে আমরা নিজেদেরকে ভালোভাবে রক্ষা করতে জানি।

সিরিয়ার পরিস্থিতি এবং ইরানের অবস্থান

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা কেমন?

উত্তর: সিরিয়ার ঘটনাবলী উদ্বেগজনক; ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর সিরিয়ার ভূখণ্ড দখল অব্যাহত রয়েছে এবং সেখানে আঞ্চলিক বিরোধ অব্যাহত রয়েছে। সিরিয়ায় আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং শান্তি বজায় রাখা ইরান ও রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বর্তমান সিরিয়ার সরকারের সাথে যোগাযোগ করছি না এবং তা করার জন্য আমাদের কোনও তাড়াহুড়ো নেই। আমরা অতীতে সেই সময়ে সিরিয়ার সরকারের সাথে কাজ করেছি এবং আমরা জানি কিভাবে শান্তি আনতে সাহায্য করতে হয়, তবে এটি সিরিয়ার সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আমরা আঞ্চলিক সরকারগুলোর সাথে পরামর্শ করছি এবং সিরিয়ার সরকার নিরাপত্তা,শান্তি এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে বলে আমরা আশা করছি। অনুরোধ করলে আমরা সাহায্য করব।#

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha