১০ মে ২০২৫ - ২২:৪২
Source: Parstoday
আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে?

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করার খবর আবারও পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা,একাডেমিক কর্তৃত্ব এবং নিরাপত্তা নীতির মধ্যে স্পর্ষকাতর সংযোগকে সবার সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছে।

সর্বশেষ পদক্ষেপে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৬৫ ​​জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। ইতিমধ্যে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যক স্নাতকসহ আরও ৩৩ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ৮০ জন ছাত্র বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পার্সটুডে-র মতে, এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আজকাল আমেরিকান একাডেমিক পরিবেশকে ঘিরে থাকা বিস্তৃত রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের প্রতিফলনও বটে।

গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে বাটলার লাইব্রেরিতে বিক্ষোভ সমাবেশের পর এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহনের ওপর  স্থগিতাদেশ এবং ব্যাপক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্ক পোস্টের মতে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন যে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে "সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা" নেওয়ার জন্য বহিরাগত চাপের প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই চাপগুলো মূলত ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের কিছু অংশ দ্বারা প্রয়োগ করা হয়েছে যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ করেছে।

ইহুদিবাদী সরকার গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা অব্যাহত রাখার সাথে সাথে এবং উপত্যকার বাসিন্দাদের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার ফলে বিভিন্ন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রতিবাদ আন্দোলন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক মাসের মতো, আমেরিকার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে তিনটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে যা জনসাধারণের পরিবেশকে ব্যাপকভাবে উত্তপ্ত করে তুলেছে।

এই প্রসঙ্গে, ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভের সময় কলোরাডোর ডেনভারের অরারিয়া উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৭ এপ্রিল ইউসিএলএ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকরা ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের দ্বারা স্থাপন করা তাঁবু ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন এবং লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ৫০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করে।

ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমেরিকান শিক্ষার্থীদের সমর্থন এবং ইহুদিবাদী শাসনের অপরাধের নিন্দা মার্কিন সরকারের প্রতিক্রিয়াকে এতটাই উস্কে দিয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কিছু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের তহবিল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন এবং এর কিছুক্ষণ পরেই তিনটি প্রধান মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতিরা একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আচরণের বিরোধিতা প্রকাশ করা হয়েছে।বিবৃতিতে ব্যাপক মাত্রার সরকারি আগ্রাসন এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আমেরিকার উচ্চশিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

আমেরিকান শিক্ষার পরিবেশ তীব্র নজরদারির মধ্যে রয়েছে এবং যেকোনো ছাত্রের কর্মকাণ্ড বা প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং ইসরাইলি নীতির প্রতিবাদকারীদের প্রতি যেকোনো সহনশীলতাকে ইসরাইল বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। যদিও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বদা নিজেদেরকে বাকস্বাধীনতা এবং বিতর্কের মুক্ত পথিকৃৎ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।#

Your Comment

You are replying to: .
captcha