আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসরাইলি হামলায় শুক্রবার একদিনেই চার শিশুসহ প্রাণ গেছে অন্তত ৭১ জনের। আর অনাহারে মারা গেছে আরও দুই ফিলিস্তিনি। এদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে গাজায় চলমান ইসরাইলি অভিযানের মধ্যেই রাজধানী তেল আবিবে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি হুতি যোদ্ধারা।
গাজা সিটি দখলের প্রথম ধাপ হিসেবে তিন দিন আগে নতুন এক অভিযানের ঘোষণা দেয় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ। গত বুধবারের (২০ আগস্ট) এ ঘোষণার পর স্থানীয় সময় শনিবার থেকে উপত্যকাটিতে বিমান হামলা শুরু করে আইডিএফ।
তীব্র বিস্ফোরণের পর দূর থেকে সেই ধোয়ার কুণ্ডলী দেখে এরইমধ্যে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয়রা। যদিও কোথায় গেলে প্রাণ বাঁচবে- এ উত্তর জানা নেই কারোরই।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘জোর করে আমাদের গাজা থেকে বিতাড়িত করার জন্য এসব হামলা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই আমাদের জায়গা বদল করতে হচ্ছে। একবার মধ্যাঞ্চলে আশ্রয় নেই, আবার সেখান থেকে সরে যেতে হয়।’
অন্য একজন বলেন, ‘অবস্থা খুবই করুণ। সোমলিয়ার দুর্ভিক্ষের চেয়ে আমাদের অবস্থা খারাপ।’
এ হামলার একদিন আগেই গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা আইপিসি। তাদের তথ্য বলছে, শুধু জুলাই মাসে গাজায় অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার শিশু।
যা গেল জানুয়ারির তুলনায় ছয়গুণ। সংস্থাটি বলছে ত্রাণ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ২০২৬ এর মাঝামাঝি সময়ে আরও ৪৩ হাজার শিশু ও ৫৫ হাজার মা আক্রান্ত হবেন অপুষ্টিজনিত রোগে। এমন তথ্যে শঙ্কিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফাও।
ফাও কর্মকর্তা রেইন পলসেন বলেন, ‘আইপিসির তথ্য অনুযায়ী গাজায় পঞ্চম ধাপের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। এছাড়া আরও ১০ লাখ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫৪ শতাংশ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের চতুর্থ ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।’
যদিও গাজায় অনাহারে মারা যাওয়া মানুষের চেয়ে ইসরাইলি জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেই আগ্রহ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আশঙ্কা হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ২০ জনও জীবিত আছেন কী না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই গাজা দখলের বিরোধিতা করছে এমনটা নয়। আপনাদের বুঝতে হবে, আমার জন্যই বেশিরভাগ জিম্মি মুক্তি পেয়েছে। আমি না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। নেতানিয়াহু, স্টিভ উইটকফকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বিষয়টির নিষ্পত্তি করেছি। আমি না থাকলে কোনো জিম্মিকেই জীবিত অবস্থায় ফেরত পাওয়া যেতো না।’
এদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রতিবাদে স্থানীয় সময় গতকাল (শুক্রবার, ২২ আগস্ট) ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি হুতিরা। হামলার পর এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, সবগুলো মিসাইল সফলভাবে প্রতিহত করা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে পালানোর সময় দুই ইসরাইলি আহত হয়েছেন।
এছাড়া তেল আবিবে হামলার দিনে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ফিলিস্থিনপন্থী।
অন্যদিকে ইসরাইল ইস্যুতে ভাঙ্গন ধরেছে নেদারল্যান্ডের মন্ত্রীসভায়, পদত্যাগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরাইলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আনা সংক্রান্ত একটি বিল বাতিলের জেরে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান ক্যাসপার ভেলদক্যাম্প।
ক্ষমতাসীন জোট সরকার থেকে বের হয়ে গেছেন কয়েকজন মন্ত্রীও। ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ ইসরাইল বিরোধী পদক্ষেপ নিতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
Your Comment