২৪ আগস্ট ২০২৫ - ১৮:১৫
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন, একদিনে নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলার তীব্রতা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত একদিনের হামলায় আরও অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫১ জন। এই হামলার বড় অংশ সংঘটিত হয়েছে গাজা সিটিতে, যেখানে একাই ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।



গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরা এ খবর নিশ্চিত করেছে।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় আলজাজিরার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার স্থানীয় একটি স্কুল ভবনের ওপর চক্কর দিচ্ছে। সেই স্কুলে যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারগুলো অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে ড্রোনটি একটি বিস্ফোরক ফেললে প্রবল ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। স্থানীয়দের দাবি, এটি ছিল সরাসরি একটি মানবিক আশ্রয়কেন্দ্রকে টার্গেট করা হামলা।

এদিকে আল-আহলি হাসপাতালের চিকিৎসা সূত্র নিশ্চিত করেছে, গাজার তুফাহ এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, হতাহতদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অনেককে অস্ত্রোপচারের জন্য যথেষ্ট সরঞ্জাম নেই। বিদ্যুতের সংকটের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণের ফলে শুধু প্রত্যক্ষ হামলায় নয়, বরং দুর্ভিক্ষ, অনাহার ও অপুষ্টিতেও মানুষ মারা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় খাদ্য সংকটে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে—তাদের একজন শিশু। এর ফলে দুর্ভিক্ষ-সম্পর্কিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৩ জনে, যার মধ্যে ১১২ জনই শিশু। এ পরিসংখ্যান ইসরাইলি অবরোধের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।

অন্যদিকে, ইসরাইলি সেনারা মানবিক সাহায্য নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি ও হামলা চালাচ্ছে। শুধু গত একদিনেই এ ধরনের হামলায় আরও ২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৩৩ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৭ মে থেকে মানবিক সাহায্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৬০ জন এবং আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৯৭ জন ফিলিস্তিনি।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, উদ্ধার কার্যক্রম ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে ইসরাইলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত, অন্যদিকে উদ্ধারকাজের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির অভাবে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া অনেক মানুষকেই বাঁচানো যাচ্ছে না। সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অসংখ্য মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে রয়েছে, অনেককে সমাহিত করারও সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি হামাস ইসরাইলের শর্তে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তবে গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এর আগেই গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার ২৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জন। অন্যদিকে, ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছিল ১,১৩৯ জন এবং জিম্মি হয়েছিল দুই শতাধিক।

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় ইসরাইলি হামলা এখন আর শুধু সামরিক অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা পূর্ণমাত্রার গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা সংকট, পানি-খাদ্যের অভাব এবং অনবরত হামলার কারণে গাজার সাধারণ মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহল মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরাইলের আগ্রাসন থামছে না।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha