২৬ নভেম্বর ২০২৫ - ১৩:৩৫
গাজায় ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত।

ফিলিস্তিন অঞ্চলে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত সহায়তা সংস্থা গাজা হিউম্যানটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): জিএইচএফ জানায়, তারা ‘জরুরি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন’ করায় কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। তাদের দাবি, সংস্থাটি এ পর্যন্ত তিন মিলিয়নের বেশি প্যাকেজে ১৮৭ মিলিয়নের বেশি মিল সরবরাহ করেছে।


সংস্থাটি জানায়, ছয় সপ্তাহ আগে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগেই তারা গাজার তিনটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত করেছিল।


জিএইচএফ জাতিসংঘের প্রচলিত সহায়তা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্য নিয়েছিল। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

জাতিসংঘের অভিযোগ, জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোর কাছে খাদ্যের সন্ধানে ভিড় করা ফিলিস্তিনিদের অনেকেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের দাবি, সেনারা সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিল।

জিএইচএফ-এর নির্বাহী পরিচালক জন অ্যাক্রি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সিভিল-মিলিটারি কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (সিএমসিসি)—যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠিত—জিএইচএফের মডেল গ্রহণ ও সম্প্রসারণ করবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র টমি পিগট এক্সে লিখেছেন, জিএইচএফ-এর মডেল হামাসকে ত্রাণ লুট করে লাভবান হওয়া থেকে বিরত রেখেছে, তাদের আলোচনার টেবিলে আনতে এবং যুদ্ধবিরতি অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ত্রাণ লুটের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে হামাস। তবে সংস্থাটির বন্ধ হওয়াকে স্বাগত জানিয়ে হামাসের মুখপাত্র হাযেম কাসেম বলেন, জিএইচএফ ফিলিস্তিনিদের ক্ষতির জন্য দায়ী এবং এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। জিএইচএফ যেন “গাজাবাসীর হতাহতের দায় এড়াতে না পারে” সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গাজায় ইসরায়েলের একতরফা অবরোধ আংশিক শিথিল হওয়ার সাতদিন পর ২৬ মে গাজায় কার্যক্রম শুরু করে জিএইচএফ। ১১ সপ্তাহের ওই অবরোধে গাজায় জরুরি দ্রব্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছিল। তিন মাস পর গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।

জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলো দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত এবং ইসরায়েলি সামরিক অঞ্চলের ভেতরে অবস্থিত ছিল।

জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররা বলে, এ ব্যবস্থাটি মানবিক সহায়তার নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতার মূল নীতির বিরোধী এবং মানুষকে সামরিক এলাকায় প্রবেশ করানো স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ২৬ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোর কাছে খাবার আনতে গিয়ে কমপক্ষে ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আরও ৫১৪ জন নিহত হয় জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ বহরের রুটের কাছাকাছি। সংস্থাটি বলেছে, অধিকাংশ মৃত্যু ইসরায়েলি সেনাদের কারণে হয়েছে।

জিএইচএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে জাতিসংঘ কেবল হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহার করছে। আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করে, কেউ “হুমকিস্বরূপ” আচরণ করলে তারা সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের পর জিএইচএফের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী ত্রাণ জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ হবে, যারা হামাস বা ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

সোমবার জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন, জিএইচএফ বন্ধ হওয়ায় তাদের ত্রাণ কার্যক্রমে কোনও প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও জানান, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বেড়েছে, তবে এটি ২১ লাখ মানুষের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha