‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শুক্রবার

৯ জুলাই ২০২১

২:৪১:৫১ AM
1158329

সাক্ষাতকার;

ফিলিপাইনে সুন্নি ও শিয়াদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির ওয়াহাবি মিশন ব্যর্থ হয়েছে: আলী আকবার আবিনাল

ফিলিপাইনের ইমাম আলী (আ.) সোসাইটির প্রধান বলেছেন, ওয়াহাবিরা ফিলিপাইনে সুন্নি ও শিয়াদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে এবং বর্তমানেও এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে কাজ করে অবশেষে বিজয়ী তাদেরই।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত দেশ ফিলিপাইনের আয়তন ৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার; এর জনসংখ্যা ১০ কোটি ১০ লক্ষ। এর মধ্যে শতকরা ৮১ ভাগ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, ৯ ভাগ প্রোটেস্টান্ট খ্রিষ্টান এবং ১০ ভাগ মুসলমান।

হিজরী ৮ম শতাব্দিতে এদেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। খ্রিষ্ট ধর্মের পর মুসলমানরাই এদেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ফিলিপাইনের মুসলমানদের একটি দল ‘মোরো’ নামে পরিচিত এবং এদের বেশীরভাগ মিন্দানাভ, সোলো এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে বসবাস করে।

মূলতঃ ইসলাম আগমনের প্রথমদিকে ফিলিপাইনে আগত সাইয়্যেদ বংশীয়দের কারণেই স্থানীয় জনগণ আহলে বাইত (আ.) সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করে কিন্তু ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর এদেশের জনগণ আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের প্রতি অধিক সংখ্যায় আকৃষ্ট হচ্ছে।

ফিলিপাইনের আলেম সমাজ প্রথম থেকেই ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে এবং ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর এদেশের আহলে বাইত (আ.)-এর প্রেমিকদের আবেদনের ভিত্তিতে আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাব সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ ইরান থেকে ফিলিপাইনে প্রেরণ করা হয়।

ফিলিপাইনে শিয়াদের মোট সংখ্যার বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় তাদের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪৬ হাজার; যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা একভাগেরও কম।

ফিলিপাইনের ইমাম আলী (আ.) সোসাইটির প্রধান ‘সৈয়দ আলী আকবার আবিনালে’র আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ বৈঠকের অবকাশে দেশটির শিয়া মাযহাবের অনুসারীদের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনাকে সাক্ষাতকার প্রদান করেছেন, সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ আপনাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন: মুহাম্মাদ জাওয়াদ মাহদিযাদে।

-আবনা: আপনার পরিচয় প্রদানের পাশাপাশি ফিলিপাইনে আপনার তৎপরতা সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন।

-আমি সাইয়্যেদ আলী আকবার আবিনাল, ফিলিপাইনের ইসলামি শহর ‘মারাভি’র বাসিন্দা। আমার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা ইমাম আলী (আ.) মসজিদ, মাদ্রাসা ও গ্রন্থাগার কেন্দ্রীক। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারীদেরকে আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি আমি ফিলিপাইনের বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করে থাকি।

-আবনা: আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাব প্রসারে নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?

-কয়েক বছর আগে ফিলিপাইনের ইমাম আলী  (আ.) মসজিদ দায়েশের (আইএস) সমর্থক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয় এবং তারপর থেকে পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। আগ্রাসী সন্ত্রাসীরা মসজিদের একটি অংশে আগুন লাগিয়ে দেয়। তবে আমাদের নিকট সরকার অনুমোদিত অস্ত্র থাকায় আমরা আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হই। আমাদের প্রতিরোধের মুখে ৩ সন্ত্রাসী হতাহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। ঐ হামলার পর আমরা মসজিদ সংস্কার করেছি।

-আবনা: ফিলিপাইনে আপনাদের তৎপরতার শক্তির দিক কোনটা?

-গণসংযোগ আমাদের সবচেয়ে শক্তির স্থান। আমিসহ ইমাম আলী (আ.) কেন্দ্রের অন্যান্য মুবাল্লিগ বিভিন্ন কেন্দ্র ও টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের ফজিলত ও তাঁদের অনুপম বৈশিষ্ট্য তুলে ধরি, পাশাপাশি ইরানের ইসলামি বিপ্লব সম্পর্কেও কথা বলি। রেডিও সাকালাইনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এ দু’টি বিষয়কে প্রচার ও প্রসারের চেষ্টা চালাই। আমাদের এ পদক্ষেপের কারণে আমরা যে প্রদেশে বসবাস করি এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রদেশের জনসাধারণও আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

-আবনা: ওয়াহাবি ফের্কাহ’র বিরুদ্ধে আপনারা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

-ওয়াহাবিরা আমাদের সত্য নির্ভর তৎপরতার বিপরীতে সৌদি পেট্রো ডলার ব্যবহার করে আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের আগেই আহলে সুন্নাত ভাইদের সাথে বৈঠকে বসেছি এবং এ বৈঠকে আমরা তাদের নিকট বিভিন্ন অস্পষ্ট বিষয় স্পষ্ট করেছি; এর মাধ্যমে মূলতঃ ওয়াহাবিরা আহলে সুন্নাতের মাঝে শিয়া মাযহাব সম্পর্কে যাতে অপপ্রচার চালাতে না পারে এবং শিয়াদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার না করতে পারে সে লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়েছি, এতে আমরা মোটামুটি সফলও হয়েছি।

দায়েশের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির অবস্থানও আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। তিনি এ দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী গ্রুপের তালিকাভূক্ত করেছেন এবং দায়েশের সক্রিয় সদস্য ও তাদের সমর্থকদেরকে আটক করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানের কারণে দেশের সুন্নি সমাজের ভালবাসার দৃষ্টি এখন আমাদের প্রতি, ইমাম আলী (আ.) মসজিদটির প্রতিও তাদের বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে।

-আবনা: আহলে সুন্নাতের সাথে যোগাযোগের শুরুটা কিভাবে হল?

-ফিলিপাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মুসলমানদের বেশীরভাগই আহলে সুন্নাত। আহলে বাইত (আ.) এর অতুলনীয় নৈতিকতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে এবং ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইমাম খোমেনি (রহ.) এর নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা আহলে সুন্নাত ভাইদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন কাজ করেছি।  

মহানবি (স.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীর মাহফিল আমাদের শহরে আমরা আহলে সুন্নাত ভাইদের সাথে মিলেমিশে আয়োজন করি। তারা এমনকি ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের শোকানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং আমাদের পাশে থেকে আযাদারী করেন। আমাদের সম্মানজনক আচরণে তারা মুগ্ধ।

(ইসলামের) শত্রু ওয়াহাবি ফিলিপাইনে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে এবং বর্তমানেও এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে কাজ করে অবশেষে বিজয় তাদেরই।

-আবনা: ফিলিপাইনে আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের প্রসারে আপনাদের কোন কাজটি সবচেয়ে বেশী ফলপ্রসু ছিল?

-আহলে সুন্নাতের সামনে মহানবি (স.) এর আহলে বাইত (আ.) এর প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরতে হাওযা ইলমিয়া কোমে অধ্যয়নরত ধর্মীয় ছাত্রদের সহযোগিতায় সৌদি সমর্থিত ওয়াহাবি শেইখদের সাথে আমরা বিভিন্ন মুনাজিরা (বিতর্ক অনুষ্ঠান) করেছি। ঐ সকল মুনাজিরাতে ওয়াহাবি শেইখদের জ্ঞানগত দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে এবং আর এ বিষয়টিই ফিলিপাইনে আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবকে পরিচয় করানোর পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে ফিলিপাইনের আহলে সুন্নাতের মাঝে আহলে বাইত (আ.) এর ইমামগণ আর অপরিচিত ব্যক্তিত্ব নন। তারা আহলে বাইত (আ.) এর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।#176