‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

২৮ অক্টোবর ২০২২

৪:৩৮:৫৮ PM
1318076

যে কারণে সিরিয়ায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল

ইহুদিবাদী ইসরাইল একমাস বিরতির পর গতকাল আবারো এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। চলতি বছর এটা সিরিয়ায় ইসরাইলের ২৮ দফা হামলা। এ অবস্থায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক এসব হামলার লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি এবং এর পরিণতিই বা কি হবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

সিরিয়ায় সম্প্রতি ইসরাইলি হামলা বৃদ্ধির সাথে ইসরাইলে আসন্ন নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে পঞ্চম দফায় ইসরাইলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরাইলি সমাজে উগ্রবাদকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ইয়ের লাপিদের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট আবারো নির্বাচনে জেতার এবং প্রধানমন্ত্রীর শক্তিশালী ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য নিজেদের কট্টরপন্থী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে যাতে আসন্ন নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে পিছনে ফেলে রাখা যায়। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইসরাইলের বর্তমান সরকার বারবার সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনেও দমন অভিযান তীব্রতর করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সম্প্রতি ইসরাইলি সেনারা নাবলুসে হামলা চালিয়ে ছয় ফিলিস্তিনিকে শহীদ এবং ২০ জনকে আহত করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্র নায়কদের মতো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইয়ের লাপিদও মনে করেন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে এবং সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে আগ্রাসন চালিয়ে আসন্ন নির্বাচনে জিততে পারবেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ইসরাইল হিজবুল্লাহর শর্ত মেনে নিয়ে লেবাননের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চুক্তিতে সই করতে বাধ্য  হয়েছে। নেতানিয়াহু নির্বাচনে জেতার জন্য এ চুক্তির বিষয়টিকে সরকার বিরোধী প্রচারণার কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এ  অবস্থায় সরকারও জনসমর্থন ধরে রাখার জন্য ফিলিস্তিন ও  সিরিয়ায় হামলা জোরদার করেছে।  যদিও এতে তাদের কারোরই লাভ হবে না।

সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে ফিলিস্তিনের হামাস ও সিরিয়ার মধ্যকার ঐক্য যার পেছনে লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ নাসরুল্লার বিরাট অবদান রয়েছে। তিনিই এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছেন। কিন্তু ইসরাইল এ কারণে চিন্তিত যে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী দল ও সিরিয়ার মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে তা হবে ইসরাইলের জন্য ভয়ঙ্কর। এ কারণে তারা সিরিয়া হামলা জোরদার করেছে। 

আরেকটি বিষয় হচ্ছে লেবানন থেকে সিরিয়ান শরণার্থীদের দেশে ফেরার কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৮০ হাজার শরণার্থীর মধ্যে পাঁচ লাখ শরণার্থী সিরিয়ায় ফিরে গেছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়া সরকার যুদ্ধ  অবসানের জন্য জাতীয় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইসরাইল চায় না সিরিয়ায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হোক এবং শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যাক।

সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিবর্তন। কারণ আমেরিকা ও ন্যাটোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসরাইলও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তখন থেকেই এ আশঙ্কা করা হচ্ছিল মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্ব রাশিয়াকে বিপদে ফেলার জন্য ইসরাইল সিরিয়ায় হামলা জোরদার করতে পারে।

কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরাইল আগুন নিয়ে খেলছে। কারণ সিরিয়াও পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।#