‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
সোমবার

৫ ডিসেম্বর ২০২২

৩:৫৯:৫৮ PM
1328855

বাহরাইনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রেসিডেন্টের সফরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

জেরুজালেম আল-কুদসের দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ গতকাল বাহরাইন সফর করেন। তিনি দেশটির আলে খলিফা হামাদ বিন ঈসার সাথে দেখা করেন এবং বৈঠকে বসেন। আলে খলিফার আমন্ত্রণেই বাহরাইনে হারজোগের এই সফর অনুষ্ঠিত হয়।

আইজ্যাক হারজোগও ঘোষণা করেছেন যে তিনি হামাদ বিন ইসা আল খলিফার আমন্ত্রণে মানামা সফরে গেছেন। তাহলে প্রশ্ন হল কেনো বাহরাইনের রাজা ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্টকে মানামা সফরের আমন্ত্রণ জানালেন?

মনে হচ্ছে এর পেছনে আলে-খলিফার প্রথম কারণ হচ্ছে বিদেশীদের সফরের ব্যবস্থা করে তিনি তার বৈধতার দুর্বলতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। বাহরাইনে সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে আলে খলিফা বিশ্ব ক্যাথলিকদের নেতা পোপ ফ্রান্সিসকে মানামা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের পরে তিনি ইহুদিবাদী প্রধানকে আমন্ত্রণ জানালেন। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার আলে-খলিফার পদক্ষেপকে দেশটির সরকার ও জনগণের সাথে যে সংকট চলছে তার প্রকাশ হিসাবে দেখা যেতে পারে। 

দ্বিতীয় কারণ হল আলে-খলিফা বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের দাবি করছেন। আলে-খলিফা সরকার যখন একদিকে বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের ওপর দমন- নিপীড়ন চালাচ্ছে তখন তিনি ফ্রান্সিস এবং হারজোগকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেকে খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের রক্ষক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। 

তৃতীয় কারণটি হল বাহরাইন সরকার ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো মাধ্যমে তেল আবিবের সহযোগিতায় তার নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করছে। ফলে বাহরাইনে কেউ ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিরোধিতা তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। 

বাহরাইনের রাজনৈতিক কর্মী আব্দুল হাদি আল-খাজাকে একটি বিদেশী সরকারকে অর্থাৎ ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকারকে কথিত অপমান অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে শাসক পরিবারের সদস্য মে মোহাম্মদ আলে খলিফা মানামায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ইতান নায়ের সঙ্গে করমর্দন না করার জন্য তাকে বাহরাইনের সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তি সংস্থার প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। 

কিন্তু হারজোগের বাহরাইন সফর থেকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর কী লক্ষ্য রয়েছে?

হারজোগের বাহরাইন সফরের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে এ দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। বাহরাইন ২০২০ সালের দিকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ শুরু করে এবং গত দুই বছরে দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যাইহোক ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রধানের বাহরাইন এবং তারপরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল এই সরকারকে ঘৃণা করা নয় তা দেখানো। কাতারে বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন আরব দেশের নাগরিকরা কেবল ইসরাইলি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেই অস্বীকৃতি জানায় নি বরং প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়েছেন।এমনকি মরক্কোর খেলোয়াড় জাওয়াদ এলিমাক কানাডার বিপক্ষে মরক্কোর জয়ের পর দ্বিতীয় ধাপে উত্তীর্ণ হলে তিনি ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেন। হারজোগ কাতার বিশ্বকাপের সময় বাহরাইন ভ্রমণ করেছিলেন এবং আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন এটা প্রমাণ করতে যে ইহুদিবাদী সরকারকে ঘৃণা করা নয়। 

হারজোগ এমন সময় ইহুদিবাদী ইসরাইলের লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন যখন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাহরাইনের জনগণ আলে খলিফা সরকারের দমন-পীড়নমুলক নীতির বিরুদ্ধে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইস্যুতে অসংখ্য বিক্ষোভ করেছে। বাহরাইনের প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক আধ্যাত্মিক নেতা শেখ ঈসা কাসেম একটি টুইটে লিখেছেন, ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ইহুদিবাদী শাসকের প্রধানের মানামায় তার দুষ্ট পদার্পনের মাধ্যমে বাহরাইনের মাটিকে দূষিত করা সত্যিই একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় যা আমাদের সম্মানিত জাতি সহ্য করতে পারে না।


342/