‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

১৮ মে ২০২৩

৭:০২:০২ AM
1366686

ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পুনর্বিবেচনা করতে মার্কিন অনুরোধে সৌদি আরবের 'না'

ইরানের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার জন্যে আমেরিকার বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিদের অনুরোধের জবাবে সৌদি নেতারা রিয়াদের এ সিদ্ধান্তকে অপরিবর্তনীয় বলে ঘোষণা করেছেন।

একটি ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাত দিয়ে আসাস মিডিয়া নিউজ সাইট একটি নিবন্ধে জানিয়েছে, সৌদি কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে দেশটি সফর করা সমস্ত মার্কিন প্রতিনিধিদের বলেছেন যে তারা ইরানের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে কখনও পিছপা হবে না এবং তারা এ সম্পর্ক স্থাপনে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সৌদি নেতারা আরো বলেছেন যে, বিশ্বের যে কোন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি সম্পন্ন দেশের সঙ্গে  রিয়াদ তার  স্বার্থ এবং মুক্ত অঞ্চলের কাঠামোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। এখানে দুটি প্রশ্নের অবতারণা করা যায়ঃ

প্রথমত, সৌদি আরব কেনো বছরের পর বছর আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল থাকার পর এখন মার্কিন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করছে? এবং দ্বিতীয়ত, কেনো আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সমঝোতার বিরুদ্ধে এবং সাধারণভাবে সব সময়  প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এবং প্রতিরোধকামী সংগঠনের বিরুদ্ধে মার্কিন অবস্থানের  কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারেঃ

প্রথমত, মার্কিন নীতি ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর নীতি ও স্বার্থের অধীন এবং এই শাসক গোষ্ঠীর সব সময় লক্ষ ছিল প্রতিরোধকামী অক্ষকে ধ্বংস করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে ইরান এবং প্রতিরোধকামী অক্ষগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে জয়লাভ করেছে। এমতাবস্থায় সৌদি আরবের সমঝোতা এই বিজয় ও এর ধারাবাহিকতাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, আমেরিকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ইসরাইল এবং আরব দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ অব্যাহত রাখা। চীনকে মোকাবেলার লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ব এশিয়ার স্থানান্তরের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের জন্য বিকল্প হিসাবে আমেরিকা ইসরাইল-আরব জোটকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যে তার উপস্থিতি অব্যাহত রাখতে হবে এবং একইভাবে অতীতের মতো ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থকে নিজের স্বার্থের চেয়ে প্রাধান্য দিতে হবে।

যাইহোক ইরান এবং প্রতিরোধের অক্ষ থেকে দূরে থাকার আমেরিকার অনুরোধের প্রতি সৌদি আরবের না বলার কারণ সম্পর্কে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে:

প্রথমত, সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নিরাপত্তার জন্য তেল বিনিময়ের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। কারণ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেল কোম্পানির তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সৌদি আরবের ওপর আমেরিকার তেল নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে।  ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেছে। 

দ্বিতীয়ত, ইরান ও প্রতিরোধকামী শক্তি তার বিরুদ্ধে তৈরি করা সমস্ত ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা সফলভাবে পাশ কাটিয়ে ময়দানে জয়লাভ করলেও অন্যদিকে আমেরিকা ও ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সহযোগিতার খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর পাশাপাশি ইয়েমেন/সিরিয়া/ইরাক/লেবানন এবং অন্যান্য অঞ্চলের যুদ্ধে সৌদি আরব তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।  

তৃতীয়ত, সৌদি কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে স্বীকার করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে এবং চীন ও রাশিয়াসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের আধিপত্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাই এটি তার পররাষ্ট্রনীতিতে পূর্ব দিকে তাকানোর পন্থা গ্রহণ করেছে এবং প্রসঙ্গত, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতাও হয়েছে।#

342/