১০ আগস্ট ২০২৩ - ১৪:৫৩
এরেদাগানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব নাকচে আসাদের যৌক্তিক অবস্থান

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আবারও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।

তিনি বলেছেন, সিরিয়া থেকে তুর্কি সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এরদোগানের সঙ্গে তার কোনো সাক্ষাৎ হবে না। লন্ডন-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল স্কাই নিউজ আরবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দামেস্কের এই অবস্থান তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।

 সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের এক বিশাল অঞ্চল দখল করে রেখেছে তুর্কি সেনারা। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ সম্প্রতি তার দেশ থেকে তুর্কি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, তুর্কি দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখে তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো আলোচনা হতে পারে নাসিরিয়া ও তুর্কি প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অচিরেই একটি শীর্ষ বৈঠক হতে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে যে গুজব প্রকাশিত হয়েছে তা কঠোর ভাষায় নাকচ করেছেন বাশার আল-আসাদ।

সম্প্রতি ইরান ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দামেস্ক ও আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দু’দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মস্কোয় বৈঠক করেছেন। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে তুরস্কের বর্তমান নীতি অবস্থানে সন্তুষ্ট নয় সিরিয়া।

স্কাই নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেছেন, “এরদোগান সিরিয়ায় তুর্কি দখলদারিত্বকে বৈধতা দিতে আমার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। তাই এরদোগানের শর্ত মেনে এ ধরনের কোনো বৈঠক হতে পারে না।” তিনি বলেন, “আমি কেন এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করব? নিছক কোমল পানীয় সেবন করতে?”

যতদিন সিরিয়া থেকে তুর্কি বিরোধী সন্ত্রাসবাদের উৎস বন্ধ না হবে ততদিন তুরস্ক তার সেনা প্রত্যাহার করবে না বলে এরদোগান যে দাবি করেন সে সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে আসাদ বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে সিরিয়ায় বিদ্যমান সন্ত্রাসবাদ তুরস্কের সৃষ্টি। আন-নুসরা ফ্রন্ট ও আহরার আল-শাম উভয়ই ভিন্ন নামে তুর্কি সৃষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আজ পর্যন্ত তুর্কি অর্থে পরিচালিত হচ্ছে। তাহলে এরদোগান কোন সন্ত্রাসবাদের কথা বলছেন?” সিরিয়ায় মাদক চোরাচালানের জন্যও তুরস্ককে দায়ি করেছেন আসাদ।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট সুস্পষ্ট করে বলেন, আঙ্কারা যদি দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় তাহলে তাকে আগে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সুস্পষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করতে হবে। বাশার আল আসাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কোনো সম্ভাবনা বা পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার অর্থ হবে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান গত মাসে বলেছিলেন, তিনি সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেননি বরং তিনি তার সিরিয় সমকক্ষ বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। এরদোগানের এ ধরনের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে তিনি এখনও এটা বোঝাতে চান যে সিরিয়ার চলমান সংকটের জন্য আসাদই দায়ি এবং তিনি দয়া করে আসাদকে সাক্ষাত দিতে চান।

আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে স্বপ্ন একদিন দেখেছিল এরদোগান ও তার পশ্চিমা মিত্র শক্তি আর আরব মিত্ররা তারা হয়ত কল্পনাও করেননি যে আসাদ এখনও টিকে থাকবেন সিরিয়ার বেশিরভাগ জনগণের সমর্থন নিয়েই এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দমিয়ে রেখে সিরিয়ার বেশিরভাগ ভূখণ্ডেই তার সরকারের কর্তৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠা করবেন।

তবে মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইল সম্ভবত এখনও কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীসহ ইসলামের নামে সক্রিয় কয়েকটি তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং  এরদোগানের কাঁধে ভর করে সিরিয়ায় সংকট জিইয়ে রাখতে চায়।

আসাদের বিরোধী প্রায় সব আরব সরকারই (কাতার ছাড়া) সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে বা করার পথে রয়েছে। এ অবস্থায় দৃশ্যত তুর্কি খেলাফত তথা সুলতানি সাম্রাজ্য পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত এরদোগান এখনও ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান প্রতীক বাশার আল আসাদের কাছে ছোটো হতে চান না!

সিরিয়ায় বিদেশি মদদে সহিংসতা চাপিয়ে দেয়ার এক বছর পর ২০১২ সালে দামেস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল আঙ্কারা। সে ঘটনার এক দশকেরও বেশি সময় পর সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে তুরস্ক ২০১৯ সালের অক্টোবরে সিরিয়ায় যে সেনা মোতায়েন করে তা দু’দেশের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হয়ে রয়েছে।#