ড্যানিয়েল অ্যালোনি নামের ওই ইসরাইলি নারীকে তার ছয় বছর বয়সি মেয়ে এমিলিয়ার সঙ্গে গাজায় আটক রাখা হয়েছিল। অ্যালোনি ও তার মেয়ে গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই মুক্তি পান।
অ্যালোনি বন্দি থাকা অবস্থায় হিব্রু ভাষায় চিঠি লিখে হামাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বলে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা তাদের সঙ্গে অত্যন্ত সদয় আচরণ করেছেন।
ড্যানিয়েল গত শুক্রবার মুক্তি পেয়ে ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একথা বলেছেন বলে শোনা যায় নি যে, তিনি হামাসের চাপে বাধ্য হয়ে চিঠিটি লিখেছিলেন। এর অর্থ হচ্ছে তিনি নিজে থেকেই চিঠিটি লিখেছেন।
চিঠির বিষয়বস্তু গত কয়েকদিন ধরে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আমরা আজ ড্যানিয়েলের চিঠির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছি।
ড্যানিয়েল অ্যালোনির চিঠির পূর্ণ বিবরণ:
“বিগত কয়েক সপ্তাহে [হামাসের] যেসব জেনারেল আমাদেরকে সঙ্গ দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। মনে হচ্ছে আমরা আগামীকাল চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের ধন্যবাদ দিতে চাই।
[ধন্যবাদ দিতে চাই এজন্য যে আপনারা] আমার মেয়ে এমিলিয়ার প্রতি অসাধারণ মানবিকতা দেখিয়েছেন। আপনারা তার সঙ্গে প্রকৃত অভিভাবকের মতো আচরণ করেছেন, যখনই সে আসতে চেয়েছে আপনারা তাকে আপনাদের রুমে ডেকে নিয়েছেন। সে আমাকে বলেছে যে, আপনারা সবাই শুধু তার বন্ধুতেই পরিণত হননি বরং সত্যিকার অর্থে আন্তরিক ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছেন।
আপনাদেরকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ [এজন্য যে] আপনারা তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন। ধৈর্য ধরে তার কথা শোনার জন্য এবং তাকে মিষ্টি ও ফলসহ অন্যান্য খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করার জন্য ধন্যবাদ; যদিও এসব খাবার আপনারা সরবরাহ করার চেষ্টা করেও সব সময় পেরে ওঠেননি।
যুদ্ধের এলাকাগুলোতে শিশুদের থাকা উচিত নয়, কিন্তু আমি ধন্যবাদ জানাই আপনাদেরকে এবং এখানে আসার পথে যেসব সহৃদয় মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদের সবাইকে। আমার মেয়ে গাজায় রানির মতো থেকেছে এবং সার্বিকভাবে তার কাছে মনে হয়েছে সে সবার মধ্যমণি হয়ে উঠতে পেরেছে।
আমাদের দীর্ঘ সফরে সামরিক বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন মানুষও আমরা পাইনি যে কিনা আমাদের সঙ্গে ভদ্র, যত্নবান ও আন্তরিক ছিলেন না।
আমি চিরকাল একজন কৃতজ্ঞ পণবন্দি হয়ে থাকব এজন্য যে, আমার মেয়ে কোনো স্থায়ী মানসিক ট্রমা নিয়ে গাজা ত্যাগ করছে না। আপনাদেরকে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং গাজায় আপনাদের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তা সত্ত্বেও আমাদের প্রতি আপনাদের সদয় আচরণ আমরা আজীবন মনে রাখব।
আমরা যদি এই পৃথিবীতে সত্যিকার বন্ধু হয়ে থাকতে পারতাম! আমি আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কামনা করছি। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের জন্য রইল ভালোবাসা। আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
342/