‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Radio Tehran
শনিবার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১

৭:৩০:০০ PM
266337

বিশ্ববাজারে যাচ্ছে ইরানের কম্পিউটার গেম

বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার গেমের জনপ্রিয়তা ও নানামুখি প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছর এ শিল্পের বাজার থেকে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ বছরে পা দেয়া এই শিল্প মাধ্যম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকসহ মানুষের জীবনের আরো অনেক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলছে।

"গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড" কম্পিউটার গেমের নানা রেকর্ড নিয়ে চার খণ্ডের একটি বই প্রকাশ করেছে। গিনেসের ২০১১ সালের সংস্করণে বলা হয়েছে, বর্তমানে সব বয়সের মানুষই কম্পিউটার ও ভিডিও গেম পছন্দ করছে। এ গেমে রেকর্ডের খাতায় সর্বকনিষ্ঠ পেশাদার সফল খেলোয়াড় হিসেবে স্থান কোরে নিয়েছে টোকিওর নয় বছরের এক শিশু। ব্যাপক স্কোর করতে সক্ষম পেশাদার খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির বয়স ৮৫ বলে উল্লেখ করেছে গিনেজ। কম্পিউটার গেমের খেলোয়াড়দের বয়সের গড় ৩৭ বছর এবং যুব শ্রেণীর ও মধ্য-বয়সী লোকেরাই কম্পিউটার গেমে বেশি আগ্রহী বলে গিনেজ জানিয়েছে।

কম্পিউটার গেমের জনপ্রিয়তা বাড়ার অর্থ এই নয় যে, এর সমালোচনা কমে গেছে। বরং মানুষের মন ও শরীরের ওপর এই গেমের ক্ষতিক প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ বা সমালোচনাও ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সমালোচকরাও কম্পিউটার গেমের ক্ষতিকর নানা দিক তুলে ধরছেন। তারা এসব গেমের প্রলোভনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পরিবার ও নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

একজন ইরানি বিশেষজ্ঞ বলছেন, "কম্পিউটার গেম কল্পনার এমন এক আকর্ষণীয় জগত গড়ে তোলে যা উত্তেজনাপূর্ণ ছবি ও বাজনায় ভরপুর। এটাই এ গেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আর এ বৈশিষ্ট্য শিশুদের ওপর খুব গভীর মাত্রায় অত্যন্ত মারাত্মক ও খারাপ প্রভাব ফেলছে। কম্পিউটার গেমের উত্তেজনাপূর্ণ আকর্ষণ শিশুদেরকে এর অন্ধ ভক্তে পরিণত করছে এবং তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে কল্পনার জগতে। এ অবস্থায় শিশু নিজেকেই গেমের নায়ক বা নায়িকা বলে কল্পনা করে অসাধারণ আনন্দ উপভোগ করে। এভাবে গেম শিশুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। আর এ বিষয়টি কোমলমতি শিশুদের মন-মানসিকতার মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম। "

কম্পিউটার গেমের প্রভাব ফেলার ব্যাপক ক্ষমতা থাকায় এর মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার, সচেতনতা গড়ে তোলা, ধর্ম প্রচার, রাজনৈতিক প্রচারণা এবং মগজ-ধোলাই বা চিন্তাভাবনা বদলে দেয়ার কাজ করাও সম্ভব। কোনো কোনো দেশের সরকার শিশু-কিশোরদের ওপর কম্পিউটার গেমের ক্ষতিকারক প্রভাব ও সহিংসতা বিস্তারে এর ভূমিকা থাকার কারণে এই গেম ব্যবহারকে সীমিত করেছে। কারণ, এ ধরণের গেমের গল্পের বিষয়বস্তুসহ নায়ক-নায়িকা ও বিভিন্ন চরিত্রের আচার-আচরণ বা ব্যক্তিত্ব প্রচলিত রীতি-নীতি ও বিশ্বাসের বিরোধী এবং এর মাধ্যমে শিশুদের কাছে সংস্কৃতি ও সমাজের অসুস্থ আদর্শ তুলে ধরা হচ্ছে। কম্পিউটার গেমের এই দিকটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক।

অবশ্য কোনো কোনো কম্পিউটার গেম শিশুদের ওপর ভালো প্রভাবও ফেলতে পারে। অনেক গবেষকের মতে, এ ধরণের গেমের কিছু অংশ সহিংসতার সাধ মেটায় বলে বাস্তব জগতে শিশু-কিশোরদের সহিংসতার ইচ্ছে কমে যায়। কোনো কোনো কম্পিউটার গেম শিশুদের কাছে ভালো অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবং এর ফলে তাদের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বা সৃজনশীল প্রতিভা বৃদ্ধি পায়। এমনকি কোনো কোনো কম্পিউটার গেম কয়েক ধরণের বিশেষ মানসিক রোগ সারানোর কাজ করে বলেও মনে করা হয়।

ইরানের কম্পিউটার গেমস ফাউন্ডেশনের প্রধান বেহরুজ মিনায়ি মনে করেন, গত কয়েক বছরে ইরানে কম্পিউটার গেম তৈরির ক্ষেত্রে কিছু ভাল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সংস্থাটি কয়েকটি কম্পিউটার গেম ছাড়াও মোবাইল ফোনের জন্যও বেশ কয়েকটি গেম তৈরি করেছে। এ সংস্থার আরো কয়েকটি গেম নির্মাণের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। ইরানের ভেতরে ছাড়াও বিশ্ববাজারেও এই গেমগুলো প্রকাশের দরকার রয়েছে বলে মিনায়ি মনে করেন।

গুণগত ও পরিমাণগত উকর্ষের কারণে এরিমধ্যে ইরানের কিছু কম্পিউটার গেম বিশ্ব বাজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত আগস্ট মাসে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে কম্পিউটার গেমের আন্তর্জাতিক মেলা- "গেমস কম ২০১১"। এই মেলায় প্রদর্শিত ইরানের কম্পিউটার গেমগুলো আন্তর্জাতিক পরিবেশকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। "মীর মাহনা", "গুপ্ত ধন বা গাঞ্জে পেনহান', "'স্তানে জাজিরেহ বা দ্বীপের গল্প", "কুহনাওয়ার্দ বা পর্বতারোহী", "তালায়ে সিয়াহ বা কালো সোনা", "কালবে সিমুর্গ বা সিমোরগের হৃদয়" এবং "মাজরায়ে রোয়ায়ি বা স্বপ্নের ক্ষেত" শীর্ষক ইরানি গেমগুলো এই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছে। এই গেমগুলো বৃটেন, জার্মানি, ইতালি, রোমানিয়া ও ফ্রান্সের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের ভুয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি এশিয়ার অনেক পরিবেশক ইরানের নির্মিত অন্য গেমগুলো না দেখেই সেগুলো নিজ নিজ দেশে প্রচারের জন্য কিনতে চেয়েছেন। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন যে, গুণগত ও পরিমাণগত দিক থেকে ইরানের গেমগুলো খুবই উন্নত মানের।

 

কম্পিউটার গেম শিল্পে ইরানের হাতে খড়ি হয়েছে অল্প কিছুকাল আগে। এত কম সময়ের পুঁজি বিনিয়োগ সত্ত্বেও দেশটির কম্পিউটার গেম বিশ্ববাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে নানা কারণে। প্রথমতঃ এসব গেমে ব্যবহৃত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। দ্বিতীয়তঃ নির্মাতারা হলেন তরুণ ও প্রতিভাবান বিশেষজ্ঞ। তৃতীয়তঃ এসব গেমের বিষয়বস্তু জনপ্রিয় ঐতিহাসিক গল্প ও আকর্ষণীয় ইরানি রূপকথা-ভিত্তিক। চতুর্থতঃ ইরানের এসব গেমে লাগামহীন সহিংসতা এবং অনৈতিক দৃশ্য বা সংলাপ নেই। বরং এসব গেম বয়সভিত্তিক গ্রুপ অনুযায়ী দর্শক-শ্রোতাদের সাথে এক সুস্থ যোগাযোগ গড়ে তোলে।

 

সহিংসতার দৃশ্যে ভরপুর বিশ্ববাজারে প্রচলিত কম্পিউটার গেমের বিষয়বস্তু নিয়ে যখন অভিভাবকদের উকন্ঠার শেষ নেই তখন বিনোদনের এ জগতে সুস্থ ভাবধারা ও শিক্ষনীয় বিষয় তুলে ধরে ইরানের কম্পিউটার গেম কোম্পানিগুলো বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের মন জয়ের চেষ্টা করছে।#