২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১৬:৫৭
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় রমজান যেন এক দীর্ঘশ্বাস

ইকনা- মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলিমরা রোজা পালন করে। অন্য মাসের তুলনায় ইবাদত-বন্দেগির প্রতি অধিক মনোযোগী হয়। তাই রমজান মাস আসার আগেই মুসলিমরা রমজানের প্রস্তুতি নেয়।

মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলিমরা রোজা পালন করে। অন্য মাসের তুলনায় ইবাদত-বন্দেগির প্রতি অধিক মনোযোগী হয়। তাই রমজান মাস আসার আগেই মুসলিমরা রমজানের প্রস্তুতি নেয়।

চারদিকে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নেই সেই আমেজ। বাস্তুচ্যুত গৃহহীন গাজার জন্য রমজান যেন এক দীর্ঘশ্বাস। এরপর চেপে বসেছে যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২৪ সালের রমজান ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন রমজান। অবিরাম বোমাবর্ষণের মুখে তাদের ছিল না সাহরি ও ইফতারের কোনো ব্যবস্থা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় স্বামী হারা ফিলিস্তিনি নারী নাজউদ। তখন জাবালিয়া ক্যাম্পের আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি ও তাঁর পাঁচ সন্তান।

তারা দিয়ার আল-বালাহে পালিয়ে যায়। সেখানে আল মানফালুতি স্কুলে আশ্রয় নেয় তাদের পরিবার। আরো তিনটি বাস্তুচ্যুত পরিবারের সঙ্গে তারা একটি তাঁবুতে বসবাস করত। আশ্রয়কেন্দ্রে তারা প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। নাজউদ ও তাঁর সন্তানরা নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হলেও চিকিৎস পায়নি।

এখানেই তাদের রমজান অতিবাহিত হয়। ক্যাম্পে তারা ইফতার ও সাহরির জন্য পর্যাপ্ত পানিও পেত না। সেখানে ইবাদতের কোনো পরিবেশ ছিল না। বাচ্চারা সব সময় ক্ষুধায় কাতর হয়ে থাকত। ফলে ইবাদতে মনস্থির করা কঠিন ছিল। তবু আশ্রয়হীন অসহায় গাজাবাসী আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন ছিল। কেননা তিনিই পারেন তাদেরকে মুক্তি দিতে।

গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর গাজাবাসী ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্য হলো তাদের ফেরার মতো কোনো ঘর নেই। যুদ্ধে গাজার বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই যুদ্ধ থামলেও আসন্ন রমজানে স্বস্তির সঙ্গে সিয়াম পালন ও ইবাদতের নিশ্চয়তা মিলছে না তাদের। একদিকে যেমন তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে গাজায় চলছে চরম খাদ্যসংকট। দখলদার বাহিনী গাজায় খাদ্য ও সাহায্য প্রবেশে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এমনকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসসামগ্রী ঢুকতে পারছে না গাজায়।

গাজাবাসীর দুঃখ-দুর্দশা আচ্ছন্ন করে আছে সারা বিশ্বের মুসলমানকে। লায়লা শফিক, প্যারিসে বসবাসরত একজন মুসলিম শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, সাধারণত রমজান উদযাপনের বিষয়। কিন্তু এ বছর রমজান আরো গম্ভীর হয়ে ফিরে এসেছে আমাদের মধ্যে। রমজান মূলত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশাপাশি বঞ্চিত মানুষের ব্যথা বুঝতে সাহায্য করে। ফিলিস্তিন এখন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যথার নাম। কেননা তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই, তারা দিনের পর দিন অনাহারে আছে।

অপর শিক্ষার্থী সুসান ইসমাইলির প্রত্যাশা—মুসলিম বিশ্ব রমজানে ফিলিস্তিনের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হবে এবং গাজাবাসীও রোজা ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা-প্রশান্তি লাভ করবে।

342/