২৯ জুলাই ২০২৫ - ২৩:২৩
ফুটসালে ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ:ইরানের নেতৃত্বে

প্রথমবারের মতো পুরুষ ফুটসাল জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইরানের অভিজ্ঞ কোচ সাঈদ খোদারাহমি।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দেশের ফুটবলের পাশাপাশি ফুটসালের উন্নয়নে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে। প্রথমবারের মতো পুরুষ ফুটসাল জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইরানের অভিজ্ঞ কোচ সাঈদ খোদারাহমি। এই নিয়োগ বাংলাদেশের ফুটসাল ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটসালের বাছাইপর্বকে সামনে রেখে গৃহীত হয়েছে।


বাংলাদেশ এর আগে কখনো পুরুষদের ফুটসাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। তবে এবার, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটসালের বাছাইপর্বে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাফুফে। এই লক্ষ্যে জাতীয় দল গঠনের জন্য উন্মুক্ত ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়, যেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ৫৩ জন খেলোয়াড় বাছাই করা হয়েছে। ঢাকায় পৌঁছে সাঈদ খোদারাহমি চূড়ান্ত ট্রায়ালের মাধ্যমে ১৪ সদস্যের দল নির্বাচন করবেন, যারা আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু করবেন।

৫৯ বছর বয়সী সাঈদ খোদারাহমি এশিয়ান ফুটসালে একটি পরিচিত নাম। তিনি ২০১০ সাল থেকে এএফসি’র ফুটসাল ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন এবং ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের পুরুষ ও নারী জাতীয় ফুটসাল দলের কোচ ছিলেন। তার নেতৃত্বে মিয়ানমারের ফুটসাল দল বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০৩ থেকে ৮০-এ উন্নীত হয়, যা ফুটসালে ২৩ ধাপ এগোনোর একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব।

এছাড়াও, সাঈদ ফুটসাল নিয়ে বই লিখেছেন এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফুটসাল উন্নয়ন প্রকল্পে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তার এই বহুমুখী অভিজ্ঞতা এবং নিবেদন বাংলাদেশের ফুটসালের জন্য একটি বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফুটসাল কমিটির চেয়ারম্যান ইমরানুর রহমান তাকে ‘ফুটসালের স্কলার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “তার অভিজ্ঞতা এবং প্যাশন আমাদের ফুটসালের যাত্রায় বড় অবদান রাখবে।”

ফুটসালে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগের জন্য এএফসি লেভেল-৩ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো কোচের এই সনদ না থাকায় বিদেশি কোচ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফে। তবে ভবিষ্যতে দেশীয় কোচ তৈরির লক্ষ্যে ফুটসাল কোচিংয়ের জন্য আলাদা কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাফুফের টেকনিক্যাল বিভাগ নিয়মিত কোচিং কোর্স পরিচালনা করে, এবং এতে ফুটসাল কোর্স যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ফুটসাল এখনো শৈশব পর্যায়ে রয়েছে। দেশে ফুটসালের জন্য নির্ধারিত কোনো ইনডোর ভেন্যু নেই। তবে হ্যান্ডবল ফেডারেশনের স্টেডিয়াম এবং মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম ব্যবহার করে অনুশীলন পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। বাফুফে সরকারের সহযোগিতায় একটি নির্ভরযোগ্য ফুটসাল অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করছে।

সাঈদ খোদারাহমি নিজে বাংলাদেশে ফুটসালের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ফুটসালের ভবিষ্যৎ খুব শক্তিশালী। ফুটসাল এখন শিশু, এবং শিশুদের সহায়তা প্রয়োজন। সবাই হাতে হাত ধরে কাজ করলে আমরা সফল হব।” তিনি ইরানের ফুটসালের উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ইরানে ৩৫ বছর আগে ফুটসাল শুরু হয়। এখন প্রতিটি গ্রামে ফুটসাল স্টেডিয়াম রয়েছে। বাংলাদেশেও এমন ভবিষ্যৎ সম্ভব।”

ঢাকায় পৌঁছেই সাঈদ খোদারাহমি তার উৎসাহ ও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি ২৬ জুলাই রাতে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি। আমার দায়িত্ব কঠিন, তবে আমি আশাবাদী। বাংলাদেশে ফুটসাল আজ জন্ম নিয়েছে, এবং আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাই।”

তিনি বাংলাদেশের খাবার ও সংস্কৃতির প্রশংসা করে বলেন, “আমার পরিবার সতর্ক করেছিল যে আমি বাংলাদেশি খাবার খেতে পারব না। কিন্তু এখানে এসে মনে হচ্ছে আমি ইরানেই আছি। আমি এখানে ভালো আছি।”

বাংলাদেশের ফুটবলে ইরানের প্রভাব নতুন নয়। বিশ্বকাপ খেলা ইরানি কিংবদন্তি গোলরক্ষক নাসির হেজাজি এক সময় ঢাকা মোহামেডান এবং জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। আবাহনীতেও ইরানি ফুটবলার ও কোচদের উপস্থিতি ছিল। এবার সাঈদ খোদারাহমির মাধ্যমে ফুটসালে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকছে।

বাফুফের ফুটসাল কমিটির চেয়ারম্যান ইমরানুর রহমান বলেন, “ফুটসাল একটি ভিন্ন খেলা, এবং এতে রোমাঞ্চ অনেক। আমরা আশা করি বাংলাদেশ শিগগিরই বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নেবে।” সাঈদ খোদারাহমির নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটসালে একটি নতুন যাত্রা শুরু করেছে। এই যাত্রা কতদূর যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবলের পাশাপাশি ফুটসালও এখন নিজের জায়গা করে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ফুটসালের এই নবযাত্রায় সাঈদ খোদারাহমির অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টি দেশের খেলোয়াড়দের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এই ইরানি কোচের হাত ধরে বাংলাদেশ ফুটসাল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের স্থান তৈরি করতে পারবে কিনা, সেটাই এখন সবার প্রত্যাশা।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha