নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে যে বিশাল নেয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো বাকশক্তি। এর মাধ্যমে একজন অন্যজনের কাছে তার মনের ভাব, আবেগ-অনুভূতি ও চাহিদা প্রকাশ করতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা 'ইসলামে কথা বলার আদব-কায়দার গুরুত্ব' নিয়ে আলোচনা করব।
কুরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা জিহ্বা ও কথা বলার ক্ষমতাকে নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন: "আমি কি তার জন্য দুটি চোখ, একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট সৃষ্টি করিনি?" (সূরা বালাদ, আয়াত ৯)।
যদিও এই নেয়ামত দেহের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় ছোট কিন্তু এগুলোর কার্যকারিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
কথা বলার দু'টি দিক:
১. বাহ্যিক বা আকৃতিগত দিক: এতে প্রকাশের ধরণ, ভাষার ব্যবহার, কণ্ঠস্বরের স্বর এবং বক্তৃতার অন্যান্য বাহ্যিক দিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।২. বিষয়বস্তুগত দিক: এতে বক্তৃতার অর্থ এবং ধারণা এবং যে তথ্য এবং ধারণা প্রকাশ করা হয় তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কুরআনে কথা বলার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু আয়াত:
১. কথা বলার সময় সতর্ক থাকো, কারণ তোমার সব কথা লিপিবদ্ধ হয়: "নিশ্চয়ই তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক নিযুক্ত আছে, সম্মানিত লেখকগণ।" (সূরা ইনফিতার, আয়াত ১০-১১)।
২. পবিত্র ব্যক্তিরা কথার মাধ্যমেও পবিত্রতার দিকে পরিচালিত হন: "তাদেরকে পবিত্র কথার দিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে..." (সূরা হাজ্জ, আয়াত ২৪)।
৩. মুমিনদের সাথে কথা শুরু করার সর্বোত্তম উপায় হলো সালাম দেওয়া: "যখন তোমার কাছে যারা আমাদের আয়াতে বিশ্বাস করে তারা আসে, তখন বলো: তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক" (সূরা আনআম, আয়াত ৫৪)।
৪. যাদের কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে, কেবল তারাই শাফায়াত পাবে: "সেদিন শাফায়াত কারও কাজে আসবে না, তবে যাকে দয়াময় আল্লাহ অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন" (সূরা ত্বহা, আয়াত ১০৯)।
৫. নসিহত করার সময় নরম ভাষা ব্যবহার করলে তা বেশি প্রভাব ফেলে: "তোমরা উভয়ে তার সাথে নরম ভাষায় কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় করবে" (সূরা ত্বহা, আয়াত ৪৪)।
৬. মাতা-পিতার সাথে সম্মানজনকভাবে কথা বলো: "...তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো" (সূরা ইসরা, আয়াত ২৩)।
৭. মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলো: "...মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলো" (সূরা বাকারা, আয়াত ৮৩)।
নবী (সা.) ও আহলে বাইতের ইমামগণের বাণীতে কথা বলার আদব:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে" (বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত আলী (আ.) বলেছেন: "অশালীন কথা বলা থেকে বিরত থাকো, কারণ তা নীচ লোকদের তোমার কাছে আকৃষ্ট করবে এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের দূরে সরিয়ে দেবে"।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: "সত্যের পক্ষে কথা বলা মিথ্যার ওপর চুপ থাকার চেয়ে উত্তম"।
ইসলামে কথা বলার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আদব:
সত্য কথা বলা, সুধারণা পোষণ করা, কোমলতা ও নম্রতা বজায় রাখা, সংক্ষেপে কথা বলা ও অপ্রয়োজনীয় বাক্যবাহুল্য এড়ানো, সক্রিয়ভাবে শোনা, শ্রোতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলা, উত্তম শব্দ ব্যবহার করা, বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করা, উপস্থিত ব্যক্তিদের সম্মান করা এবং কথা শুরুর আগে দরুদ পাঠ করা।
342/
Your Comment