১০ জুন ২০২৫ - ১৯:৫০
খুলনায় ইমাম খোমেনি (রহ.) ও শহীদ রাইসি-এর স্মরণে অনুষ্ঠান

ইসলামী বিপ্লবের মহান প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ছত্রিশতম শাহাদাত বার্ষিকী এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি-এর প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে খুলনার ইসলামিক এডুকেশন সেন্টারের "আল-কাউসার" হলে এক জাঁজমকপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

আহলে বাইত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী বিপ্লবের মহান প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ছত্রিশতম শাহাদাত বার্ষিকী এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি-এর প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে খুলনার ইসলামিক এডুকেশন সেন্টারের "আল-কাউসার" হলে এক জাঁজমকপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

2830215.jpg

. ভূমিকা: স্মরণানুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট

ইসলামী বিপ্লবের মহান প্রতিষ্ঠাতা, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, হযরত ইমাম রুহুল্লাহ মুসাভি খোমেনি (রহ.)-এর ছত্রিশতম শাহাদাত বার্ষিকী এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি, জনগণের সেবক ও ইসলামী মূল্যবোধের ধারক, আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি-এর প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি শুধু দুই মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই ছিল না, বরং তাদের আদর্শ, সংগ্রাম এবং ইসলামী উম্মাহর প্রতি তাদের অবদানের স্মরণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল। আবনা (আহলে বাইত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অনুষ্ঠানটি খুলনার ইসলামী পরিমণ্ডলে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং উপস্থিত সকলের মনে গভীর আধ্যাত্মিক প্রভাব ফেলেছে।

. অনুষ্ঠানের আয়োজন স্থান

খুলনার ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, যা দীর্ঘকাল ধরে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রসারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তাদের "আল-কাউসার" হলকে এই ঐতিহাসিক স্মরণানুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং শহীদ রাইসি-এর প্রতিকৃতি, তাদের বিপ্লবী আদর্শের প্রতীকী চিত্র এবং ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি দিয়ে পুরো হলটিকে এক আধ্যাত্মিক আমেজ দেওয়া হয়েছিল।

2830218.jpg

. প্রধান অতিথি আমন্ত্রিত বক্তাগণ

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন আমন্ত্রিত বক্তাগণ, যারা ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং শহীদ রাইসি-এর জীবন, কর্ম ও আদর্শের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের বক্তব্য উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং তাদের চিন্তাভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।

. অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ সাজ্জাদ হুসাইন। তিনি তার বক্তব্যে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর বিপ্লবী চিন্তাভাবনা, তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং ইসলামী বিপ্লবে তাঁর অবিস্মরণীয় ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর সেই বিপ্লবী আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দেন যা অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সাইয়্যেদ সাজ্জাদ হুসাইন শহীদ রাইসি-এর আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন এবং তাঁর জীবন ছিল ইসলামী বিপ্লবের সেবায় নিবেদিত। তিনি শহীদ রাইসি-এর জনসেবামূলক কাজ, তাঁর সততা এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে ইসলামী বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ইমাম খোমেনি (রহ.) ও শহীদ রাইসি-এর আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।

518893.jpg

খ. হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল কাইয়ুম

আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল কাইয়ুম। তাঁর বক্তব্যে তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক দিক এবং তাঁর নৈতিক শিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।  তিনি  বলেন যে, ইমাম খোমেনি (রহ.) শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ আলেম, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক গুরু। তিনি তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে কিভাবে মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও খোদাভীতির পথে পরিচালিত করেছেন, তার উদাহরণ দেন। শহীদ রাইসি-এর জীবনের সঙ্গে ইমামের আধ্যাত্মিকতার সংযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, শহীদ রাইসি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমামের দেখানো পথে চলেছেন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি শহীদ রাইসি-এর ধৈর্য, সততা এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, যা তাঁর আধ্যাত্মিকতার প্রতিফলন ছিল।

. আব্দুল লতিফ

অন্যতম আমন্ত্রিত বক্তা আব্দুল লতিফ তার বক্তব্যে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর বিপ্লবী দর্শন এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) এমন এক সময়ে ইসলামী বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন যখন মুসলিম বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চক্রান্তে জর্জরিত ছিল। তাঁর নেতৃত্ব মুসলিমদের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছিল এবং বিশ্বজুড়ে ইসলামী আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করেছিল। তিনি শহীদ রাইসি-এর পররাষ্ট্রনীতি, তার সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অবস্থান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় তার অটল প্রতিশ্রুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে শহীদ রাইসি-এর সাহসিকতা ও আপোষহীন মনোভাবের প্রশংসা করা হয়।

. মুহাম্মদ ইকবাল

মুহাম্মদ ইকবাল, তাঁর বক্তব্যে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভিত্তি স্থাপনে তাঁর অসামান্য অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) শুধুমাত্র একটি দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং তাঁর বার্তা ছিল সমগ্র মানবজাতির জন্য। তিনি ইসলামী বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক নীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণার ওপর ইমামের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। মুহাম্মদ ইকবাল শহীদ রাইসি-এর প্রশাসনিক দক্ষতা এবং ইরানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি শহীদ রাইসি-এর নেতৃত্বগুণ, সংকট মোকাবিলায় তাঁর দৃঢ়তা এবং জনগণের সমস্যা সমাধানে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, শহীদ রাইসি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং তার আদর্শকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

. জাফারিয়া রিডার্স সোসাইটি-এর অবদান

অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল "জাফারিয়া রিডার্স সোসাইটি"-এর সদস্যদের অংশগ্রহণ। এই সোসাইটি দীর্ঘকাল ধরে ইসলামী জ্ঞান চর্চা ও প্রচারের কাজ করে আসছে এবং তাদের সদস্যরা ইসলামী ব্যক্তিত্বদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গভীর গবেষণা করে থাকেন।

"জাফারিয়া রিডার্স সোসাইটি"-এর সদস্য শাহজাহান ও আইয়ুবসহ অন্যান্য সদস্যরা এই দুই বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব, ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং শহীদ রাইসি-এর প্রতি তাদের মতামত ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তাদের বক্তব্যে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর বিপ্লবী জীবন, তাঁর কারাবাসের অভিজ্ঞতা, তাঁর নির্বাসন এবং অবশেষে ইসলামী বিপ্লবকে সফল করার ক্ষেত্রে তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কথা তুলে ধরা হয়। তারা শহীদ রাইসি-এর সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে ছিল তাঁর বিচার বিভাগের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর দায়িত্ব পালন এবং জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা। তাদের বক্তব্যে এই দুই মহান ব্যক্তির ত্যাগ, সাহসিকতা এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। তারা বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) ও শহীদ রাইসি-এর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করে আমরা ন্যায় ও সত্যের পথে এগিয়ে যেতে পারি।

. উপস্থিতির বিবরণ অনুষ্ঠানের প্রভাব

খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম, ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানটি আধ্যাত্মিকতা, শ্রদ্ধা ও অনুপ্রেরণায় পরিপূর্ণ এক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিতির সংখ্যা এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং শহীদ রাইসি-এর আদর্শ এখনও জনগণের হৃদয়ে জীবন্ত।

. উপসংহার

খুলনায় আয়োজিত এই স্মরণানুষ্ঠানটি হযরত ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এক মহৎ উদ্যোগ ছিল। এই অনুষ্ঠানটি কেবল দুটি মহান আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই ছিল না, বরং তাদের আদর্শ, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের শিক্ষাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। ইসলামী এডুকেশন সেন্টার, জাফারিয়া রিডার্স সোসাইটি এবং সকল অংশগ্রহণকারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অনুষ্ঠানটি এক অবিস্মরণীয় সফলতায় পর্যবসিত হয়। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো ইসলামী উম্মাহর মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।

Your Comment

You are replying to: .
captcha