আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): স্পেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মুরসিয়ার শহর হুমিয়ায় মুসলিমদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় উৎসব সরকারি জনসাধারণের স্থানগুলোতে উদ্যাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে দেশটির রক্ষণশীল পিপলস পার্টি (পিপি)। বুধবার রাতে (৬ আগস্ট) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্পেনে এটাই প্রথমবারের মতো এমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা।
এই বিষয়ে এক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘নগরীর ক্রীড়া ও জনকল্যাণমূলক কেন্দ্রগুলো কোনো ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা যাবে না, যদি না তা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত হয় এবং আমাদের পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়।’
চরম ডানপন্থী দল ভক্স এবং স্থানীয় দলগুলো এই প্রস্তাবনায় ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও পিপলস পার্টির পক্ষে সিদ্ধান্তটি পাস হয়। তবে এক্স প্ল্যাটফর্মে ভক্স লিখেছে, ‘ভক্সের চেষ্টায় স্পেনে প্রথমবারের মতো ইসলামিক উৎসব জনসাধারণের স্থানে নিষিদ্ধ হলো। স্পেন খ্রিষ্টানদের ভূমি ছিল, আছে এবং থাকবে।’
স্পেনের ইসলামিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশনের সভাপতি মুনির বেনজেলউন আন্দালুসি আজহারি এই সিদ্ধান্তকে ‘ইসলামবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। স্পেনের পত্রিকা এল পায়েস-কে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা হচ্ছে, অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। আমি গত ৩০ বছরে কখনো ভয় পাইনি, কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছি।’
হুমিয়া শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ৭.৫ শতাংশই মুসলিম দেশ থেকে আগত।
এই সিদ্ধান্ত স্পেনের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মতাদর্শ, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে; শুধু জনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে।’
মুরসিয়ার সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রান্সিসকো লুকাস বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে পিপলস পার্টি সংবিধান লঙ্ঘন করে সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।’ হুমিয়ার সাবেক মেয়র হুয়ানা গুয়াদিওলা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তাদের পরিচয় বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? হুমিয়ায় শত শত বছরের মুসলিম ঐতিহ্য কী তবে মুছে যাবে?’
উল্লেখ্য, হুমিয়া আগে রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হলেও অষ্টম শতকে আরবদের দখলে যায় এবং কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম শাসন চলেছিল। খ্রিষ্টান রাজা আলফনসো এক্স-এর আগমনের আগে পর্যন্ত এটি আরব-প্রধান শহর হিসেবে পরিচিত ছিল।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এখন স্পেন জুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সাম্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
Your Comment