পার্স টুডে জানিয়েছে, পাকিস্তানের সংসদ সদস্যরা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের দাবিকে ভিত্তিহীন অভিহিত করে ওয়াশিংটনকে ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে নজর দিতে বলেছেন।
গত বুধবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে পাকিস্তানের নির্বাচনে কথিত অনিয়মের বিষয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালুচ বলেছেন, পাকিস্তান ‘গঠনমূলক আলোচনা’ এবং সংশ্লিষ্টতায় বিশ্বাস করে, তবে এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো ‘গঠনমূলক বা উদ্দেশ্যমূলক নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই বিশেষ প্রস্তাবের সময় এবং প্রেক্ষাপট আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিবাচক গতিশীলতার সাথে ভালোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কিত অসম্পূর্ণ বোঝাপড়া থেকে উদ্ভূত হয়েছে।’
এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের অবস্থানের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার আমেরিকার নেই।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে খাজা আসিফ গাজায় চলমান যুদ্ধের সময় ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি অতীতে বিদেশি সরকারগুলোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে জড়িত থাকার মার্কিন ট্র্যাক রেকর্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘এমন একটি দেশ থেকে এই প্রস্তাব এসেছে যেটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে উৎখাত করে বিংশ শতক কাটিয়েছে এবং বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে সহায়তা করছে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘আমরা কাউকে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দিতে পারি না। পাকিস্তান মার্কিন রেজুলেশনের বিষয়টি বিবেচনা করেছে এবং অবশ্যই এটির প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
বৃহস্পতিবার দেশটির জাতীয় পরিষদে ইসহাক দার এসব কথা বলেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রস্তাবের জবাবে পাকিস্তান দু-এক দিনের মধ্যে একটি প্রস্তাব আনবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
‘পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ’ শিরোনামে প্রস্তাবটি গত ২৫ জুন মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবে ‘গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত রাখতে’ এবং পাকিস্তানি জনগণের ‘মানবিক, নাগরিক বা রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের যেকোনও প্রচেষ্টার নিন্দা করার জন্য’ পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’
প্রস্তাবটি কংগ্রেসের ৩৬৮ সদস্যের সমর্থনে পাস হয় এবং এর বিপক্ষে মাত্র সাতটি ভোট পড়ে। ইমরান খানের দল পিটিআই মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাস হওয়া এই প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটি দাবি করে থাকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন মূলত নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন মাস পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই নির্বাচনেও ইমরানের দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘ব্যাট’ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৩টি আসন জয়লাভ করে, যা অন্য যেকোনও দলের চেয়ে বেশি। তবুও এই ফলাফল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মানদণ্ডে কম ছিল এবং পিটিআই দাবি করে, তাদের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৫ এবং ৫৪টি আসন জিতেছে। সরকার গঠনের জন্য তারা অন্য আরও ছোট দলগুলোর সাথে পরে জোট গঠন করে।#
342/