আহলে বাইত
(আ.) বার্তা সংস্থা- আবনা- জানিয়েছে: ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী
(হা.) সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর পবিত্র
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশটির সামরিক কর্মকর্তা, ইসলামী দেশসমুহের রাষ্ট্রদূত, ঐক্য সম্মেলনের
জন্য আমন্ত্রিত অতিথি এবং বিভিন্ন স্তরের অতিথিদের একটি দলের সাথে সাক্ষাতকালে পবিত্র
কুরআনের শিক্ষা থেকে অত্যাচারী শক্তির বিপদের অনুভূতিকে তাদের পবিত্র কুরআন
অবমাননার কারণ হিসাবে অভিহিত করেছেন এবং আমেরিকা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ
মোকাবেলার উপায় হিসেবে ইসলামী দেশসমূহের ঐক্য এবং মৌলিক বিষয়ে একক নীতি
অবলম্বনের উপর তাকিদ করে জোর দিয়ে বলেছেন, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার হীন উদ্যোগ চোরাবালিতে পা
রাখার ন্যায় ও নিশ্চিত পরাজয়; কারণ আজ
ফিলিস্তিনি আন্দোলন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত এবং আরও বেশি প্রস্তুত।
পক্ষান্তরে, ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা মৃত্যু পথযাত্রী।
এই বৈঠকে ইসলামী বিপ্লবের নেতা মহানবী (সা.) ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে এই মহান দুই ব্যক্তিকে মানবিক উপলব্ধির ঊর্ধ্বে এবং মৌখিক বর্ণনায় তাঁদের মর্যাদা ও ফযিলত তুলে ধরা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে বলেন, সূর্যের ন্যায় প্রজ্জ্বলিত মহানবী (সা.) মানবতার সকল সদস্যের উপর অধিকার রাখেন এবং আমরা সকলেই তাঁর কাছে ঋণী; কারণ মহানবী (সা.) হলেন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো যিনি দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, নিপীড়ন, বৈষম্য, লালসা, অবিশ্বাস, লক্ষ্যহীনতা, নৈতিক অবক্ষয় এবং মানবজাতির যেকোনো সামাজিক সমস্যার সমাধান দিয়ে গেছেন।
বিশ্বের সকল বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ মানবিক অধিকার হিসেবে আমাদের জীবনের উপর তাঁর অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) তোমাদেরকে অনন্ত জীবন দান করবেন, যা তোমাদের ইহ ও পরকালের সুখ নিশ্চিত করবে, এই জীবন শেষ হওয়ার নয় এবং এখানে কোনো প্রকার তিক্ততার মুখোমুখি হতে হবে না। আর এজন্য, আমরা সকলেই তাঁর কাছে ঋণী এবং তিনি মানবতার মাঝে চিরভাস্বর হয়ে থাকার অধিকার রাখেন।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা "আল্লাহর পথে পরিপূর্ণ জিহাদ"কে মহানবীর (সা.) এই ঋণ পরিশোধের পথ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, জিহাদের অর্থ শুধু অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা নয়, বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি এবং নৈতিকতাসহ সকল ক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ নিহিত রয়েছে এবং এই ক্ষেত্রগুলিতে জিহাদের মাধ্যমে সামর্থ্য অনুযায়ী সেই পবিত্র সত্ত্বার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।
আজ ইসলামের সাথে শত্রুতা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট ও প্রকট হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে এই শত্রুতার উদাহরণ হিসেবে পবিত্র কুরআনের অজ্ঞতাপূর্ণ অবমাননাকে তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন অজ্ঞ ও মুর্খ পবিত্র কুরআনের অপমান করে এবং সরকার তা সমর্থন করে, ঘটনাটি কেবল পবিত্র কোরআন অবমাননার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামী বিপ্লবের নেতা আরো বলেন, সেই অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তির সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যে পর্দার অন্তরালের লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে নিজেকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করে। এসব অপরাধ ও ঘৃণ্য কাজের মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী (হা.) এইসব অপচেষ্টার মাধ্যমে কুরআনকে দুর্বল করার অলীক স্বপ্নকে বিভ্রান্তিকর এবং কুরআনের শত্রুদের মুখোশ উন্মোচক আখ্যায়িত করে বলেন: কুরআন প্রজ্ঞা, জ্ঞান, প্রকৃত মানুষ তৈরি এবং ঘুমন্ত মানবতাকে জাগ্রতকারী গ্রন্থ। কুরআনের সাথে শত্রুতার অর্থ হচ্ছে এর সুউচ্চ জ্ঞান ও শিক্ষার সাথে শত্রুতা। অবশ্যই, কুরআন দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তির জন্য হুমকি। এটি যেমন অত্যাচারি যালিমের নিন্দা করে, তেমনি যারা যুলুম-অত্যাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদেরকেও তিরস্কার করে। তিনি বাকস্বাধীনতার মতো মিথ্যা দাবি দিয়ে কুরআন অবমাননাকে তাদের নিজেদের অপমানের কারণ বিবেচনা করে বলেছেন, যেসব দেশে বাক-স্বাধীনতার অজুহাতে কুরআনের অবমাননা করা যায়, সেসব দেশে কি তারা জায়নবাদী প্রতিষ্ঠান গুলোতে হামলার করার অনুমতি দেয়? এর চেয়ে আর কোন ভাষায় প্রমাণ করতে হবে যে তারা বিশ্বের নিষ্ঠুর, অপরাধী ও লুটেরা ইহুদিবাদী শাসনের অধীনে রয়েছে।
তাঁর ভাষণের অন্য অংশে ঐক্য সপ্তাহের কথা উল্লেখ করে ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইসলামী দেশসমূহের কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিবিদ এবং ইসলামী বিশ্বের বিশেষজ্ঞ ও অভিজাতদের এই প্রশ্নটি নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান, “ইসলামী দেশগুলোর ঐক্যের ক্ষেত্রে শত্রু কে এবং মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য কাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে, কাদের চুরি-ডাকাতি ও লুটতরাজ ও অবৈধ হস্তক্ষেপের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে?"
পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার ইসলামি দেশগুলোর ঐক্য যুক্তরাষ্ট্রের চুরি, জবরদস্তি ও অবৈধ হস্তক্ষেপ রোধ করবে বলে জোর দিয়ে তিনি বলেন: আজ যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের দেশগুলোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আঘাত করছে, সিরিয়ার তেল চুরি করছে এবং নিজের ক্যাম্পগুলোয় নিষ্ঠুর, বর্বর এবং রক্তপিপাসু আইএসআইএস-কে লালন করছে যাতে প্রয়োজনের দিনে তাদেরকে আবার মাঠে নামাতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির মৌলিক এবং সাধারণ বিষয়ে একক নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এবং পররাষ্ট্র নীতিতে হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাবে না।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরোও সংযোজন করেছেন, যেমনটি আমরা বহুবার বলেছি, আমরা কাউকে যুদ্ধ এবং সামরিক পদক্ষেপে উৎসাহিত করি না; বরং আমরা এ বিষয়টি এড়িয়েও যাই। তাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ হল আমেরিকাকে যুদ্ধ শুরু করা থেকে বিরত রাখা; কারণ তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে এবং এই অঞ্চলের সমস্ত যুদ্ধের পিছনে রয়েছে বিদেশী প্ররোচনা।
তিনি ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য ইস্যু অর্থাৎ ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ক্রমাগত অপরাধের বিষয়ে ইসলামী বিশ্বের সকল কর্মকর্তা ও পদধারীদের চিন্তাভাবনা করা আবশ্যক বলে উল্লেখ করে বলেছেন, আজ এই ইহুদিবাদী শাসন ব্যবস্থা শুধুমাত্র ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি নয়, বরং তার আশেপাশের সমস্ত দেশ, যেমন- মিশর, সিরিয়া এবং ইরাকের প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ ও বিদ্বেষ পোষণ করে। ইসলামী বিপ্লবের নেতা এই ঘৃণা ও ক্ষোভের কারণ হলো বিভিন্ন সময়ে এই দেশগুলো তাদের লক্ষ্যে -যেটি হলো নীলনদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত দখল করা- পৌঁছুতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিহিত করে বলেছে, তারা ঘৃণা ও ক্রোধে পরিপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা অনুসারে, যা বলে, "ক্রোধান্বিত হও এবং এই ক্রোধে মারা যাও।" তারা ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং মহান আল্লাহর সাহায্যে সীমালঙ্ঘনকারী গোষ্ঠীটি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
তিনি ফিলিস্তিন ইস্যু এবং একটি জাতিকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়ন এবং নির্যাতন ও হত্যাকে গত কয়েক দশকের মধ্যে ইসলামি বিশ্বের প্রথম ইস্যু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সুনির্দিষ্ট অভিমত হল, যে সরকারগুলো ইহুদিবাদী শাসকদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কারণ এই শাসনব্যবস্থা (ইহুদিবাদী ইসরাইল) শীঘ্রই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং তারা মাকড়সার জালে প্রাসাদ তৈরির বাজি ধরছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ফিলিস্তিনি যুবসমাজ এবং ফিলিস্তিনে দখল ও নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকে আগের চেয়ে আরও জীবন্ত, উদ্যমী ও সদা প্রস্তুত বলে উল্লেখ করে বলেন, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই আন্দোলন সফল হবে এবং যেমন ভাবে ইমাম খোমেনী (র.) এই দখলদার শাসনকে ক্যান্সার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, এই শাসন স্বয়ং ফিলিস্তিনি জনগণের হাতে এবং প্রতিরোধ শক্তির মাধ্যমে মূলোৎপাটিত হবে। পরিশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আল্লাহর রহমতে ইসলামী উম্মাহ গৌরব ও মর্যাদার সাথে তার অনন্য প্রাকৃতিক ও মানবিক প্রতিভার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।#176S