‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

৩১ জানুয়ারী ২০২৪

৭:৩৮:৫৫ PM
1434069

জাতিসংঘের ত্রাণসংস্থাকে ঘিরে ইসরাইলের নতুন ষড়যন্ত্রের রহস্য

গাজায় প্রায় চার মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযান।

আর এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থা আনরোয়ার প্রতি অর্থ সাহায্য বন্ধের পশ্চিমা পদক্ষেপ যাতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীদের ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে গণহত্যা জোরদার করা যায়। 

গাজাবাসীর ধৈর্য ও প্রতিরোধের চেতনা এবং হামাসকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন এই ষড়যন্ত্র কার্যকর করছে ইসরাইল ও তার সহযোগী কোনো কোনো পশ্চিমা সরকার। গত ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী হামলায় আনরোয়ার কোনো কোনো কর্মী জড়িত ছিল বলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বানোয়াট দাবি তোলার একদিন পরই কোনো তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন, জার্মান ও ব্রিটিশ সরকারসহ কয়েকটি পশ্চিমা সরকার আনরোয়াকে প্রদেয় বার্ষিক অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করেছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাপানি সরকারও! ফলে খুব শিগগিরই ঘর-বাড়ি ও সহায়-সম্পদ-হারা গাজার লাখ লাখ অধিবাসী খাদ্য, জ্বালানী ও ওষুধসহ নানা জরুরি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর শিকার হতে পারে। অন্য কথায় ইসরাইলি গণহত্যা অভিযান বা জাতিগত নির্মূল অভিযান হবে জোরদার। 

জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থা আনরোয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ সাহায্য দেয়ার কাজ করে আসছে সেই ১৯৪৯ সাল থেকে যখন সন্ত্রাসী ইসরাইল ফিলিস্তিন থেকে সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে চলে যেতে বাধ্য করে। ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি ফিলিস্তিনের ভেতরে ও বাইরে আনরোয়ার ত্রাণ সাহায্য পাচ্ছিল। বিশেষ করে গাজার যুদ্ধ-কবলিত বেসামরিক জনগণের জন্য এই ত্রাণ সাহায্য বেশ জরুরি বা অপরিহার্য। 

রাশিয়া, ইরান ও হামাস পশ্চিমা দেশগুলোর এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাও ইসরাইলের বানোয়াট দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে আনরোয়াকে অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে আরও জোরালোভাবে শরিক হচ্ছে এইসব সরকার।

প্রশ্ন হল ইসরাইল কেনো এমন সময় এই গুজব বা অপবাদ প্রচার করল? বিশ্লেষকরা বলছেন, হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াইয়ে ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইসরাইলের পরাজয়কে আড়াল করতে এবং ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও গাজার অধিবাসীদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ জোরদার করতে ইসরাইল এই অপবাদ প্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। 

গাজায় গণহত্যার দায়ে হেগের আদালতে দক্ষিণ-আফ্রিকার সরকারসহ বহু দেশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ও নিন্দিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও গণমাধ্যমে ইসরাইলের এবং তার সহযোগীদের অবস্থান বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আর এভাবে তারা জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থার তৎপরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি জাতিসংঘের ওই আদালতের রায়কেও বিশ্ব-জনমতের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।  

সামরিক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের পরাজয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে ইসরাইল এখন তার পশ্চিমা সহযোগীদের সহযোগিতায় এই নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান জোরদার করার পদক্ষেপ নিল। পশ্চিমা সরকারগুলো এমন সময় ইসরাইলের বানোয়াট দাবিকে গুরুত্ব দিল যখন গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় আনরোয়ার ১৫০ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। অথচ গোটা পাশ্চাত্য ইসরাইলের এই নজিরবিহীন অপরাধের ব্যাপারে নীরব থেকেছে।  ইসরাইলের ওই অভিযোগ যদি সত্যিও হয়ে থাকে তবুও জাতিসংঘের এই ত্রাণ-সংস্থার হাজার হাজার কর্মীর সেবাকে উপেক্ষা করা ও সামষ্টিকভাবে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের শিকার কয়েক মিলিয়ন দুর্গত ফিলিস্তিনিকে শাস্তি দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। #