‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

৪ এপ্রিল ২০২৪

১:৫০:৫২ PM
1449006

শুক্রবার বিশ্ব কুদস দিবস: ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্বাধীন জাতিগুলোর জেগে ওঠার দিন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এক সমাবেশে 'আল-আকসার ঝড়' সফল অভিযান এবং গাজা আক্রমণের লক্ষ্য অর্জনে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এবারের বিশ্ব কুদস দিবস ইরানি জাতির উৎসাহ উদ্দীপনা এবং এ দিবসের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বাধীনতাকামী মুসলিম জাতিগুলোর উপস্থিতি দখলদার ইসরাইল বিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও জাগরণের দিবসে পরিণত হবে।

গুরুত্বপূর্ণ গাজা ইস্যুটি যেন কোনোভাবেই বিশ্ববাসী দৃষ্টির বাইরে চলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়ে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা, নারী ও শিশু হত্যা এবং হাসপাতালে বোমা বর্ষণের ঘটনাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন,

'ইসরাইলের এই অপরাধের মাত্রা এতো বিশাল ও বিস্তৃত যে,  এমনকি ইউরোপ-আমেরিকার মতো পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা মানুষও ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে'।

তিনি ছয় মাসের যুদ্ধের ফলাফলের প্রতি ইঙ্গিত করে দুটি দিক থেকে ইসরাইলের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,

'ইসরাইলের প্রথম ব্যর্থতা ছিল গত সাত অক্টোবর সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পরিচালিত আল-আকসা ঝড় অভিযানের ঘটনা, যেখানে ইসরাইলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা সারা বিশ্বের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে এবং তাদের এ ক্ষতি কখনোই পূরণ হবার নয়। কেননা ইসরাইল সবসময়ই নিজেদের গোয়েন্দা  সামর্থ্যকে বিশ্বের  সেরা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালাতো। কিন্তু এখন তাদের মান সম্মান ধূলার সাথে মিশে গেছে'।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইসরাইলের দ্বিতীয় ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেছেন, 'গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে ইসরাইল এখন পর্যন্ত তাদের কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি। ইসরাইল আমেরিকার সর্বাত্মক সামরিক-আর্থিক ও রাজনৈতিক সমর্থন নিয়েও এবং আমেরিকার ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার করেও তেলআবিব একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি'।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেন,            

'শত্রুরা চেয়েছিল প্রতিরোধ শক্তিকে বিশেষ করে হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করতে। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলন ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া সীমাহীন যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ সত্বেও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে'। 

প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সামনে অসহায়ত্বের কারণে ইসরাইলিরা এখন নিরপরাধ নারী ও শিশুদের হত্যা ও ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক কাজে লিপ্ত বলে উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন,

'নিঃসন্দেহে, ইহুদিবাদীদের এ ব্যর্থতা অব্যাহত থাকবে এবং তারা সিরিয়ায় ইরান দূতাবাসে হামলা চালিয়ে যে জঘন্য কাজটি করেছে তার জন্য তাদেরকে অবশ্যই অনুতপ্ত ও পাল্টা প্রতিশোধের সম্মুখীন হতে হবে। তাই এসব করে ইসরাইল তাদের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না'।

ইসরাইল তাদেরই পাতা যে ফাঁদে পড়েছে তা থেকে তাদের উদ্ধার পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন,

'অবৈধ ইসরাইল সরকার দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়বে এবং পতন ও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা আশা করি আমাদের যুবকরা অচিরেই সেই দিনটি দেখতে পাবে যেদিন পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের হাতে থাকবে এবং তারা সেখানে নামাজ পড়বে এবং মুসলিম  বিশ্ব দখলদার ইসরাইলের ধ্বংস হয়ে যাওয়াকে উৎসব করবে'। 

ইরানরে সর্বোচ্চ নেতা, ইরানে ইসলামি বিপ্লব  এবং একটি ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য বিরাট সুযোগ ও নেয়ামত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা দিন দিন আরো শক্তিশালী হবে এবং শত্রুরা দুর্বল হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন,

'আল-আকসা ঝড়ের পর প্রতিরোধ ফ্রন্টের অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়েছে এবং তাদের বিরোধী শক্তিগুলোর আঞ্চলিক হিসাব নিকাশ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। শত্রুরা আরো বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং ইসলাম ও ইরানের শত্রুরা এই আশু পরিবর্তনকে মেনে নিতে বাধ্য হবে। তাই তাদের এটা  জেনে রাখা উচিত যে, এই মুসলিম ভূখণ্ডে জুলুম নির্যাতন ও মোড়লিপনা তারা আর বেশি দিন অব্যাহত রাখতে পারবে না'।

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এই সমাবেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের অন্য অংশে জনগণের কল্যাণে কাজ করা এবং দেশের অগ্রগতির জন্য প্রচেষ্টাকে আল্লাহর জন্য কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন,

'জনগণের কাজকে আরো সহজ করার প্রচেষ্টার অর্থ হলো আল্লাহর জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং আল্লাহ অবশ্যই এই প্রচেষ্টার পুরস্কার দেবেন'।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ফার্সি নতুন বছরে 'জনগণের অংশগ্রহণে উৎপাদন বৃদ্ধি' স্লোগানটি উপলব্ধি করার পাশাপাশি সরকারের করণীয় দিক সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, 

'জনগণের আর্থিক সামর্থ্য, মেধা ও উদ্যোগকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগালে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে'।

তিনি মানুষের ক্ষমতাকে প্রাকৃতিক ক্ষমতার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে বলেছেন, 'শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতির প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তায় ইরান বহুদূর এগিয়ে গেছে'।

হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দেশে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকায় এই খাতের উন্নয়নে জনগণের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

৬৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থসহ বিশ্বের প্রায় ৭ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী ইরান এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ রয়েছে ইরানে। এটা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিরাট সুযোগ।#