‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

১৩ এপ্রিল ২০২৪

৯:২৫:৪৫ PM
1451071

২০০২ সালে ফিলিস্তিনের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ: আমেরিকার এক অধ্যাপকের পর্যবেক্ষণ

পার্সটুডে: ২০০২ সালের মার্চের শেষে কুখ্যাত এবং ঘৃণ্য প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারনের নির্দেশে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বিশাল সামরিক অভিযান চালায়। ১৯৬৭ সালের পর ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ওই আক্রমণটি ছিল সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। ইহুদিবাদী বাহিনী রামাল্লা, তুলকারম, কালকিলিয়া, নাবলুস, বেথেলহাম এবং জেনিনে আক্রমণ চালায়।

ওই হামলার লক্ষ্য ছিল পশ্চিম থীরের গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যা কেন্দ্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। ২০০২ সালের এপ্রিলের ৩ থেকে ১৭ পর্যন্ত অ্যারিয়েল শ্যারনের নির্দেশে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা করেছিল।

জেনিন শরণার্থী শিবিরের ওপর ওই বিমান হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং মিডিয়া কর্মীদের বিশ্বাস যে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি সেই হামলায় নিহত হয়েছিল। ৪ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উদ্বাস্তু শিবিরসহ তার আশপাশ এবং এখানকার প্রধান হাসপাতালের চারপাশে কঠোর অবরোধ আরোপ করেছিল ইসরাইল। সে কারণে শিবিরের ভেতরে কী ঘটছে বাইরের বিশ্বের পক্ষে সে সম্পর্কে জানার কোনও উপায় ছিল না ...

ওই প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অন্যান্য প্রামাণ্য বিষয়ও তুলে ধরেছে। যেমন হত্যাকাণ্ড, ফিলিস্তিনিদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা, নির্যাতন এবং বন্দীদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা, আটককৃতদের সঙ্গে অমানবিক এবং অবমাননাকর আচরণ; খাদ্য পানীয়ের অভাব সৃষ্টি; চিকিৎসা ও মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা প্রদান; এবং মালামাল ব্যাপকভাবে ধ্বংস করাসহ শহুরে অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস করা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রাজনৈতিক কর্মী এবং স্বাধীন সাংবাদিক জেনিফার লেভেনস্টাইনকে ২০০২ সালের বসন্তে হিউম্যান রাইটস সেন্টারের পক্ষ থেকে সেই শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। তিনি তার প্রতিবেদনে ওই ইস্যুটি এবং ওই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মিডিয়ার উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন:

প্রথম প্রথম বুঝে উঠতে পারি নি যে আমি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছেছি কিনা। আমার সামনে ছিল একটা বিরানভূমি। আমার মনে আছে এক বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উদ্বাস্তু শিবিরটা কোথায়? আমার দিকে তাকিয়ে সেই বরান ভূমি দেখিয়ে বললো: এটাই ক্যাম্প। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম উদ্বাস্তু শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞ কতোটা বিপর্যয়কর। আমি ধ্বংসাবশেষের এক স্তূপ থেকে আরেক স্তূপে ঘুরে বেড়াতাম এবং প্রায়শই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী দেখলাম আমি! মাটি কর্দমাক্ত ছিল এবং মহিলা ও শিশুসহ লোকেরা তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্পদ উদ্ধার করার চেষ্টা করছিল। জরুরী চিকিৎসা দলকে সাহায্য করার জন্য ধসে পড়া ভবনগুলির চারপাশ পরিষ্কার করে পথ তৈরি করে দিচ্ছিল এবং ক্ষতিগ্রস্থদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল। জেনিনের কথা এখন বিস্মৃত; এই ঘটনাটি ২০ বছর আগের, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় তারচেয়েও ভয়ঙ্কর অনেক অভিযান হয়েছে। অতএব, এ ধরনের ট্র্যাজেডিগুলো স্মরণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, কারণ বিশ্বব্যাপী উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈশ্বিক প্রতিরোধ সেইসব স্মৃতি উজ্জীবিত করার মাধ্যমেই শুরু হয়। 

স্মৃতি জাগ্রত রাখার ফলে বিশ্বব্যাপী অসন্তোষ বেঁচে থাকে। নিউজ মিডিয়া যদি তাদের সরকারের নীতি অনুসরণ করে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের ব্যর্থতার দায় আমাদের প্রতিটি মানুষের ওপর বর্তায়। অন্তত জেনিনকে ভুলে যাওয়া বিস্মৃত যুদ্ধগুলোর একটি। জেনিনের কথা কিংবা ভুলে যাওয়া অপরাধ স্মরণ করা এক ধরনের প্রতিরোধের শামিল। এটা অতীতের মুখোমুখি হওয়া এবং বর্তমানকে পরিবর্তন করার ইচ্ছারও প্রকাশ। সেইসঙ্গে এটি ভবিষ্যতের আশা এবং জনগণের কর্মতৎপরতা প্রাথমিক পদক্ষেপও বটে।#


342/