‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

১১ মে ২০২৪

৮:৪৪:২০ PM
1457887

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি:

জায়নবাদী শত্রুরা আরও বেশি হত্যার পাঁয়তারা করছে/ নীরব অবস্থানের জন্য আরব শাসকদের লজ্জিত হওয়া উচিত

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা বলেন: জায়নবাদী শত্রুরা রাফাহ হামলায় সেখানকার শরণার্থীদেরকে লক্ষ্যবস্তু করছে এবং এ পর্যায়ে তাদের জন্য যা আরেকটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়নবাদী শত্রুরা আরও বেশি হত্যার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বৃহস্পতিবার দেয়া এক ভাষণে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক বাদরুদ্দিন আল-হুথি ঘোষণা করেন, মার্কিন সরকার জায়নবাদী সরকারকে রাফাহ ক্রসিং-এ প্রবেশের সবুজ সংকেত দিয়েছে।

ইসরায়েল রাফায় হামলা করলে আক্রমণাত্মক অস্ত্র পাঠানো বন্ধের বিষয়ে দেয়া জো বাইডেনের গতরাতের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে আল-হুথি বলেন, আমেরিকা অস্ত্রের চালান বন্ধের মাধ্যমে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির দাবি করে জনমতকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে। যদি আমেরিকা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি চায়, তাহলে অবিলম্বেই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেত; কিন্তু তারা এমনটা চায় না। আমেরিকা ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের বড় চালান পাঠিয়েছে, যা রাফাহ’বাসীদের গণহত্যার জন্য যথেষ্ট। আমেরিকার ছল-চাতুরীতে প্রতারিত হবেন না।

তিনি আরও বলেন, রাফাহ ক্রসিং-এ হামলার অর্থ মিশরকে চ্যালেঞ্জ করা এবং দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তির লঙ্ঘন। রাফাহ ক্রসিং-এ হামলার অর্থ আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর বিরুদ্ধে একটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপ এবং তাদেরকে ছোট মনে করা।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা বলেন, জায়নবাদী শত্রুরা রাফাহ হামলায় সেখানকার শরণার্থীদেরকে লক্ষ্যবস্তু করছে এবং এপর্যায়ে তাদের জন্য যা আরেকটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জায়নবাদী শত্রুরা আরও বেশি হত্যার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি রাফাহ হামলার বিষয়ে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, রাফায় যা ঘটছে সে বিষয়ে নিন্দা জ্ঞাপন করা অকার্যকর এবং মার্কিনীরা সেগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনা। এমনকি মার্কিনীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের প্রতি লক্ষ্য করেনি এবং তাদেরকে দমন করেছে এবং আইনের বিরুদ্ধে যেয়ে তাদের সাথে সহিংস আচরণ করেছে।

আল-হুথি আরও বলেন, রাফার জনগণ ও শরণার্থীদের উদ্দেশ্য করে শত্রুর হামলার বিরুদ্ধে আরও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আরব ও মুসলিমরা দায়বদ্ধ। আরব ও মুসলমানদের দর্শক হওয়া যাবে না এবং অবশ্যই ফিলিস্তিনি জাতিকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাফাহ ক্রসিং খালি করার জন্য শত্রুকে চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই মিশরকে আরব আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকতে হবে।

রাফাহ আগ্রাসনের বিপরীতে আরব দেশগুলোর অনেক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকল্প রয়েছে এবং এ ব্যাপারে মিশরের প্রতিবাদ লিপি যথেষ্ট নয় এবং ইসরায়েলি শত্রুরা এতে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ করবে না।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা মানবতাকে হুমকির মুখে ফেলা জায়নবাদের অনুপ্রবেশ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রশংসা করেন এবং বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন আমেরিকা ও পশ্চিমাদেরকে কলঙ্কিত করেছে, কেননা তারা মানুষের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কথা বলতো। শিক্ষার্থীদের দমন-পীড়ন তাদের মানবাধিকারের দাবিগুলোকে বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছে।

আরব সরকারগুলোর তাদের নীরবতার জন্য লজ্জা করা উচিত

তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কতিপয় আরবদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ আন্দোলন আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি। বিভিন্ন দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন তাদের জাতির জাগরণকে তুলে ধরে। জায়নবাদী শত্রুর কর্মকাণ্ডের বিপরীতে মুসলমানদের নীরব থাকা শোভা দেয় না। আরব সরকারগুলোর নিজেদের নীরবতার বিষয়ে লজ্জা করা উচিত। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জায়নবাদী সরকারের বিরুদ্ধে তুরস্কের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করছি এবং আশা করছি তুরস্কের এই পদক্ষেপ জায়নবাদী শত্রুর সাথে পরিপূর্ণভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর্যায়ে নিয়ে যাবে।

আল-হুথি তার বক্তব্যে বলেন, আরব দেশগুলোর হাতে একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিকল্প রয়েছে। যদি আরব সরকারগুলোর কোন পদক্ষেপ নেয়ার সাহস না থাকে তাহলে জনগণ তাদের জায়গায় ময়দানে নামবে এবং ব্যাপক আকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা তার বক্তব্যে বলেন, জায়নবাদীরা আরব ও মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার ভিত্তিতে নিজেদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং গাজায় আমরা যে নৃশংস অপরাধ-যজ্ঞ প্রত্যক্ষ করছি তা মুসলমানদের প্রতি তাদের ঘৃণার মাত্রাকে দেখায়।

তিনি মনে করেন ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের মূলে রয়েছে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও লোভ এবং বলেন, এছাড়াও পশ্চিমাদের মধ্যে জায়নবাদ শিকড় ছড়িয়েছে।

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি তার বক্তব্যের অপর অংশে ইঙ্গ-মার্কিন জোটের জাহাজ এবং ইলাত বন্দরে অগ্রসর হওয়া জাহাজগুলির বিরুদ্ধে ইয়েমেনের অভিযানের বিষয়ে কথা বলেন এবং উল্লেখ করেন, এখনো পর্যন্ত ১১২টি জাহাজ লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং এ সপ্তাহেও ১০টি ব্যালেস্টিক মিসাইল, ক্রুজ ও ড্রোন শত্রুর লক্ষবস্তুতে নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী গত মাসে ২৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং সেখানে ৭১টি ব্যলিস্টিক, ক্রুজ ও ড্রোন ব্যবহার করেছে।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা বলেন, এই দলটি ইসরায়েলি সরকারের পণ্য সরবরাহ বা পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত যে কোন কোম্পানির জাহাজকে তাদের গন্তব্য নির্বিশেষে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।

জাহাজগুলোর গন্তব্য অধিকৃত ফিলিস্তিন হলে বা সেদিকে যাতায়াত করলে লক্ষবস্তুতে পরিণত হবার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটি গাজা উপত্যকার দক্ষিণে (রাফাহ অঞ্চলে) তীব্র উত্তেজনাকর ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধের চতুর্থ ধাপ ।

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি আরও বলেন, এর পরে আমরা পঞ্চম ও ষষ্ট ধাপের চিন্তা করছি এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদনশীল এবং কার্যকর সব পদক্ষেপ বাছাই করে রাখা আছে।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা তার বক্তব্যে আরব দেশগুলোর প্রতি আরও সক্রিয় অবস্থানের দাবি জানান এবং বলেন

চতুর্থ ধাপ ঘোষণার সাথে সাথে বিক্ষোভ মিছিল ও আন্দোলনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সংখ্যা ৪২৫০ এ পৌঁছেছে। জনগণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের কর্মসূচি ও সমাবেশ ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং আগ্রহী সামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৬ হাজারে পৌঁছেছে এবং এর ভাল দিকটি হল যা অব্যাহত রাখতে হবে। লক্ষ লক্ষ বিক্ষোভ কর্মসূচি লক্ষ লক্ষ ইয়েমেনীদের সাপ্তাহিক কাজে পরিবর্তিত হয়েছে। শত্রু যতটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, প্রতিক্রিয়ার পরিমাণও ততই বাড়াতে হবে। আমি আমার প্রিয় জাতিকে আগামীকাল সানা এবং অন্যান্য প্রদেশে লক্ষ জনতার মিছিল আয়োজনের আহবান জানাচ্ছি। যাতে আপনারা গাজা, সমগ্র ফিলিস্তিন জাতি ও রাফার অধিবাসীদেরকে বলতে পারেন, তোমরা একা নও; আমরাও তোমাদের পাশে আছি।#176A