২০২৫ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজার উপর নতুন করে ব্যাপক আক্রমণ এবং এই অঞ্চলের জনগণের বিরুদ্ধে অবরোধ শুরু করে। পার্সটুডের রোববারের এক প্রতিবেদন অনুসারে,ফিলিস্তিনি আল-হক ইনস্টিটিউটের পরিচালক শাওয়ান জাবারিন ইহুদিবাদীদের ক্রমবর্ধমান অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে গাজাকে "নরক" হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা ৬০ দিনের তীব্র অবরোধ,পরিকল্পিত অনাহার এবং বন্ধ ক্রসিংগুলোর মুখোমুখি। জাবারিন আরও বলেন, 'ক্ষুধার দানব হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে,এবং শিশু,অসুস্থ এবং গর্ভবতী মহিলারা বিপদের মধ্যে রয়েছে।'
গাজা উপত্যকার সরকারি তথ্য অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা এই বিষয়ে বলেন, 'দখলদাররা ২৯টি দাতব্য কেন্দ্র এবং ৩৭টি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়ে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।' ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) মুখপাত্র কাজেম আবু খালাফও গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকটের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ব্যাপক অপুষ্টি কয়েক ডজন শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং শত শত গর্ভবতী মহিলার জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।
আবু খালাফের মতে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অপুষ্টিতে কয়েক ডজন শিশু মারা গেছে এবং এক হাজারেরও বেশি গর্ভবতী মহিলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
গাজা এবং পশ্চিম তীরে অপরাধের বৃদ্ধি
গাজা যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার ৪৮তম দিনে ইসরাইলি সরকারের হামলার ফলে খান ইউনিসে ছয়জন ফিলিস্তিনি শহীদ হন এবং জাবালিয়া ও আল-মাওয়াসিতে কয়েক ডজন লোক আহত হন। প্যালেস্টাইনের মুক্তির জন্য পপুলার ফ্রন্ট গাজার বিশৃঙ্খলার জন্য ইহুদিবাদী সরকারকে দায়ী করে ঘোষণা করেছে, "দখলদাররা গাজা পুলিশের উপর বোমা হামলা চালিয়ে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।" এই ফ্রন্ট জন সুরক্ষা কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। পশ্চিম তীরে জেনিন এবং তুলকার্মে হামলার ফলে ২২,০০০ লোক বাস্তুচ্যুত হয় এবং ১০৬টি ভবন ধ্বংস হয়।
ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধের প্রতি ইয়েমেনি প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলি সরকারের অপরাধযজ্ঞের জবাবে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী রোববার সকালে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে যে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর তেল আবিব অধিকৃত জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের বসতিগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে। ইসরাইলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে "হাইতস ৩" এবং "থাড" নামে দুটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আটকাতে এবং ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র "ইয়াহিয়া সারি" এই বিষয়ে বলেছেন: "এই আক্রমণ আমেরিকা এবং ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। সারি জোর দিয়ে বলেন, গাজার অপরাধ বন্ধ এবং অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইয়েমেন প্রতিরোধ আন্দোলন ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত অব্যাহত রাখবে।
ইহুদিবাদীদের সামরিক ব্যর্থতা এবং অভ্যন্তরীণ সংকট
ইসরায়েলি সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী,ইহুদিবাদী সরকার সেনা ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজা যুদ্ধ সম্প্রসারণের জন্য ৬০,০০০ রিজার্ভ সৈন্যের আহ্বান সামরিক বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। ইয়েদিওথ আহরোনোথ এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, "অনেক সৈন্য তাদের চাকরি ত্যাগ করছে এবং তাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।"
ইহুদিবাদী বন্দীদের পরিবারও বিক্ষোভ করেছে,নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভা টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে বন্দীদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগ তুলেছে। তারা বলল, বন্দীদের বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা উৎখাত করা। এছাড়াও,রাফায় এক বোমা বিস্ফোরণে দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং চারজন আহত হয়। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ৮৪৯ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং ৫,৮০৬ জন আহত হয়েছে; ১৯৭৩ সালের পর থেকে এক নজিরবিহীন পরিসংখ্যান।#
342/
Your Comment