পার্সটুডে জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর জোর দিয়ে বলেছেন: 'আমরা চ্যাভিজমের শক্তি প্রদর্শন করেছি।' এই ফলাফল শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিজয় এবং এই যুদ্ধ ভেনেজুয়েলার মহৎ, সাহসী এবং বিজয়ী জনগণের।
ভেনেজুয়েলার প্রায় ৪৩ শতাংশ নাগরিকের ভোটদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ৫৬৯টি পদ নির্ধারণ করা হয়। এইসব পদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিষদের ২৮৫ জন সদস্য (২০২৬-২০৩১ মেয়াদের জন্য), ২৬০ জন রাজ্য আইন প্রণেতা (আইন পরিষদের সদস্য) এবং ২৪ জন গভর্নর। এছাড়াও, প্রথমবারের মতো, জনগণ 'গায়ানা এসকুইবা' অঞ্চলের গভর্নর নির্বাচিত করেছে। এ অঞ্চল নিয়ে ভেনেজুয়েলার গায়ানা প্রজাতন্ত্রের সাথে আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। ব্রিটেন এবং পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সহায়তায় বছরের পর বছর ধরে গায়ানা অবৈধভাবে দখল করে থাকা এই অঞ্চলটি সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদের কারণে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিভাগের জন্য একজন গভর্নর নির্বাচন জয়ের একটি কৌশলগত এবং প্রতীকী দিক তুলে ধরে। এই প্রেক্ষাপটে মাদুরো গুয়ানা এসকাইবার গভর্নর নির্বাচনের ওপর জোর দেন এবং অভিনন্দন জানান। সেইসথে তিনি সিমন বলিভারের ভূমিতে নতুন ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বের জন্মের ওপরও জোর দেন।
ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংসদীয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচনকে সে দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে; এমন একটি নির্বাচন যা কেবল শাসন কাঠামোর পুনর্নবীকরণযোগ্য বৈধতাই প্রদর্শন করে না, বরং বিরোধী দলের সমস্ত অভ্যন্তরীণ চাপ এবং অবিরাম বিদেশী হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, চ্যাভিজমের স্থায়ী শক্তি এবং উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ন্যায়বিচার ছড়িয়ে দেওয়ার নীতিগুলোও প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে, এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জোটের ৮২ শতাংশেরও বেশি ভোটে জয়লাভের ঘটনা প্রমাণ করছে ভেনেজুয়েলার জনগণ সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রতিরোধ, স্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে। বিশেষ করে যখন এই নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছেল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের দ্বারা আরোপিত ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে দেশটির বিরুদ্ধে ভারী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে এবং মাদুরোর দেশীয় বিরোধীদের শক্তিশালী ও সমর্থন করে নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করে আসছে।
তবে, এই নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে ওয়াশিংটন এবং তার মিত্রদের সর্বোচ্চ চাপ ব্যর্থ হয়েছে। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, জনগণ দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষেই ভোট দিয়েছে, বলিভারিয়ান বিপ্লবের নীতি এবং দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করেছে। এই নির্বাচনটি আসলে ইউরোপীয়-আমেরিকান নব্য উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রধান জনপ্রিয় গণভোট ছিল।
এখন, এই নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে, মাদুরো সরকার "প্রতিরোধ অর্থনীতি" মডেলের কাঠামোর মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। সরকারের উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন ইউনিটের পুনরুজ্জীবন এবং রপ্তানি সহজীকরণকে তাদের এজেন্ডায় রাখা।
সামাজিক দিক থেকে, অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প, সামাজিক আবাসন, ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য বিতরণ এবং জনস্বাস্থ্যের বিনামূল্যে অ্যাক্সেসের মতো কর্মসূচি ভেনেজুয়েলা সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে। এমন একটি নীতি যা পশ্চিমা দেশগুলির নীতির বিপরীতে, সমতা এবং মানবিক মর্যাদার নীতির উপর ভিত্তি করে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে, ভেনেজুয়েলা আবারও ALBA, CELAC এবং UNASUR-এর মতো মহাদেশীয় ইউনিয়নগুলোতে তার নেতৃত্বের ভূমিকা ফিরে পাবে। ভেনেজুয়েলার দৃষ্টিভঙ্গি হলো সম্মান, ন্যায়বিচার এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপস্থিতি ছাড়াই একটি আঞ্চলিক ঐক্য।
সংক্ষেপে, এটা বলা যেতে পারে যে ভেনেজুয়েলার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিজয় কেবল একটি নির্বাচনী ঘটনা নয়; এই বিজয় বিশ্বব্যাপী একটি ঘোষণা: ভেনেজুয়েলার জনগণ নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে না, বিদেশী আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না এবং স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। মনে হচ্ছে এই নির্বাচনের ফলাফল আবারও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী নীতি এবং হুমকির ওপর একটি বড় ধরনের রেখা টেনে দিয়েছে।#
Your Comment