২৩ জুলাই ২০২৫ - ০১:৫৫
ইসরায়েল গাজা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষ সেনা সংকটে

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো জনবল সংকট স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সোমবার (২১ জুলাই) ইসরায়েলের দৈনিক মারিভ গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সেনার ঘাটতি রয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সংবাদমাধ্যমটি জানায়, সেনাবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ প্লাটুন কমান্ডারের অভাব রয়েছে, বিশেষ করে স্থল যুদ্ধ ইউনিটগুলোতে। এই পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ সেনাদের অফিসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনভিজ্ঞ সার্জেন্টদের অস্থায়ী প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

কেবল প্লাটুন পর্যায়েই নয়, কোম্পানি পর্যায়েও নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। গত কয়েক মাসে সেনাবাহিনী এমন অফিসারদের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে, যারা অফিসিয়াল কোম্পানি কমান্ডার কোর্স সম্পন্ন করেননি। এতে সামরিক দক্ষতা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

নিয়মিত বাহিনী ও রিজার্ভ ইউনিট উভয়ের ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিবার থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকার কারণে তীব্র মানসিক ও শারীরিক চাপের মুখে রয়েছেন তারা। অনেকে আবার সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের উপর চাপ ততই বেড়ে যাচ্ছে। তরুণ সেনাদের নেতৃত্বে আসার আগ্রহ কমে গেছে, যার ফলে সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

মারিভ আরও জানায়, গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অফিসার ও কমান্ডার নিহত হয়েছেন, এবং শত শত সেনা আহত হয়েছেন। যদিও ইসরায়েল সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সেনা মৃত্যুর খবর গোপন করে রাখা হচ্ছে, যার ফলে মনে করা হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। অনবরত বোমাবর্ষণে পুরো গাজা এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খাবার, পানি, ওষুধের সংকটের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ রোগ ও অপুষ্টি।

এই বর্বরতার কারণে ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিক আইনের মুখোমুখি। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াওয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাতেও অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও ইসরায়েল এখনো তা প্রত্যাখ্যান করে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha