আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন- যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়, গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যার মানসিক চাপ এবং হতাশা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আত্মহত্যার প্রবণতা মূলত গাজা যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত মানসিক চাপ ও নৈতিক পতনের ফল।
ইসরায়েলের সংসদ নেসেটের গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ১২৪ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছে, যাদের ৬৮ শতাংশ ছিলেন বাধ্যতামূলক সেনাসেবায় নিয়োজিত সৈনিক এবং দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিলেন সক্রিয় যুদ্ধ ইউনিটের সদস্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা থেকে ফিরে আসার পর অনেক সৈন্য তীব্র মানসিক বিকার, বেসামরিক হত্যাযজ্ঞের অপরাধবোধ ও আবারও যুদ্ধে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আত্মহত্যার মতো ভয়ানক পথ বেছে নিচ্ছে।
অনেক সৈন্য জানিয়েছেন- বেসামরিক মানুষ হত্যা বিশেষকরে শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণের মতো কর্মকাণ্ডের নৈতিক চাপ তাদের মধ্যে গভীর লজ্জা, শূন্যতা ও হতাশা তৈরি করেছে, যা পর্যাপ্ত মানসিক সহায়তার অভাবে আত্মহত্যার মানসিকতা তৈরি করছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানসিক পরামর্শ কেন্দ্র ও হেল্পলাইন চালু করেছে, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে- সেনাবাহিনীর কঠোর ও বন্ধ সংস্কৃতি কার্যকর চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি করছে। অনেক সৈন্য সামাজিক বা পেশাগত কলঙ্কের ভয়ে তাদের বিষণ্নতার লক্ষণ গোপন করে রাখছে।
এই সংকট এখন ইসরায়েলি সমাজকেও নাড়া দিচ্ছে। আত্মহত্যায় প্রাণ-হারানো সেনাদের পরিবারগুলো সরকারকে এসব বিষয় স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করতে এবং এই মৃত্যুগুলোকে “সেবারত অবস্থায় মৃত্যু” হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানাচ্ছে।
হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমগুলো এই বলে সতর্ক করেছে যে, এই মানসিক ভাঙন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আজ এমন এক যুদ্ধে লিপ্ত যা গাজা বা লেবাননে নয়, বরং তাদের নিজেদের বিবেকের ভেতরেই চলছে। এই আত্মহত্যার প্রবণতা এখন তাদের অভ্যন্তরীণ পতনের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা দশকের পর দশক ধরে দখল ও সহিংসতার ভিত্তির ওপর নির্মিত।
Your Comment