‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : parstoday
রবিবার

১৯ ডিসেম্বর ২০২১

২:১২:৩৫ PM
1210146

চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন: ‘বিজিবি দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ‘বিজিবি দিবস-২০২১’ উদযাপন উদ্বোধনীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : রোববার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর পিলখানাস্থ বিজিবি  সদর দপ্তরে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। তাতে নিজেদেরই ক্ষতি। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা শৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্য কর্তব্য।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর রয়েছে ২২৬ বছরের গৌরবময় ইতিহাস। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রতিষ্ঠার পর হতে কালের পরিক্রমায় এ বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইপিআর’র প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাঙালি সৈনিক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ৮ শ’ ১৭ জন শাহাদত বরণ করেন। ইপিআর’র দু’জন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ আমাদের গর্বের প্রতীক।

ইপিআরের ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে বিজিবি’র ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে তিনি শাহাদাতবরণকারী সদস্যদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর পরই বিডিআর-এ সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠন করি। সরকার গঠনের ১ মাস ১৯ দিনের মাথায় ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা দ্রুত সমাধান করি। তৎকালীন বিডিআর’র ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। 

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার সময় একটি অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার নিমিত্তে জাতির পিতা এই বাহিনীর পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন ইপিআর’র পরিবর্তে বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) নামকরণ করেন। পরে এই আওয়ামী লীগ সরকারই ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ আইন-২০১০ পাশের পর এই বাহিনীকে পুনর্গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’কে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এই বাহিনীকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে ৫ জন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ৫টি রিজিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে রূপান্তরের নিমিত্তে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজিবি’র উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কার্যক্রম পূর্বের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজনের মাধ্যমে রাশিয়া হতে ক্রয়কৃত দুইটি অত্যাধুনিক এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।

তিনি বলেন, তার সরকার সীমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড টেকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন ও সম্প্রসারণ করেছে।

বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ২৪৭টি অল টেরেইন ভেহিক্যাল (এটিভি), উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি হাইস্পিড বোট, ২টি ভেহিক্যাল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৪টি আধুনিক ও যুগোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স ক্রয় করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সাল হতে অদ্যাবধি বিজিবিতে নয়টি নিয়মিত ব্যাচের সাথে সর্বমোট ৮১৮ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছে এবং পুরুষ সৈনিকের পাশাপাশি মহিলা সৈনিক হিসেবে সুচারুরূপে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি বলেন, ভারত ও মায়ানমার সীমান্তে ইতোমধ্যে চারটি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় দুইটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চট্টগ্রামের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুনভাবে আরও একটি ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’ সৃজনের উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদক পাচার ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি’র কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা করাও আপনাদের অন্যতম দায়িত্ব। সংসদীয় নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং বিভিন্ন সময়ে উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশ গঠনমূলক কাজে আপনাদের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

বিজিবি’র আভিযানিক কর্মদক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে অফিসার্স, জেসিও’স ও অন্যান্য পদবীর বিজিবি সদস্যদের জন্য নতুন কোয়ার্টার, বাংলো, মেস, সৈনিক ব্যারাক, আধুনিক বিওপি, অফিস বিল্ডিং, ওয়াটার রিজার্ভার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ইত্যাদিসহ সর্বমোট ১১৩টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ যাবত ৪৫ হাজার ৩৮৩ জন বিজিবি সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের রেশন সুবিধা এবং মসলা ভাতা পূর্বের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিজিবি সদস্যগণ যেন অবসর গ্রহণের পরও তাদের অবসরকালীন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে সে লক্ষ্যে অবসরোত্তর বিজিবি’র সদস্যগণকে দুই সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের আজীবন রেশন সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

বিজিবি দিবসে  প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময়  বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে অভিবাদন জানায়।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবি সদর দপ্তরে ‘বিজিবি সম্মেলন কেন্দ্রে’র উদ্বোধন করেন।#

342/