‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
মঙ্গলবার

১৬ মে ২০২৩

১২:২২:৪৯ PM
1366167

দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি; ক্ষতি হ্রাসে নতুন উদ্ভাবনে ব্যস্ত গবেষকরা

বঙ্গীয় ভূ-স্থলের এই দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, খরা মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রায় প্রতিবছরই বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, মৌসুমি ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছেই। বস্তুত ভৌগোলিক গঠন ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে এ পর্যন্ত বিপুল প্রাণের ক্ষয়, ফসলের ক্ষতি, সম্পদহানি হয়েছে।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় কয়েক লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রায় এক কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৭ সালে দেশে বন্যায় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সোয়া কোটি মানুষ। খেতের ফসল, বাড়িঘর, গবাদি পশু, গাছপালা সবই ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি।

চলতি শতকের গেল ২০ বছরে বিশ্বের যে ১০টি দেশ সবচেয়ে বেশি দুর্যোগআক্রান্ত হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ নবম। এ সময়ে বাংলাদেশের ১১ কোটি ২০ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে দুর্যোগের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ২০০২ সালে। ওই বছর ৬৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। ২০১৫ সালে ৪৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি মানুষ দুর্যোগের কবলে পড়ে। মারা যায় ৬০ হাজার মানুষ।

তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিগত কযেক দশকে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের গোর্কি নামের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। ভেসে যায় লক্ষ লক্ষ গবাদি পশু ও আবাদি ফসল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় এক লাখ আটত্রিশ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। এছাড়া এক কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১০ লাখ ঘর-বাড়ি।

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’-এর আঘাতে মারা যায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। ঝড়ের প্রভাবে প্রায় ৯ লাখ ৬৮ হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়। ফসল নষ্ট হয় ২১ হাজার হেক্টর জমির। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় কমপক্ষে তিন লক্ষ পরিবার ঘর-বাড়ি হারান। মারা যায় প্রায় দু’শ মানুষ।

এছাড়া, ২০১৩ সালের ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোহসেনের আঘাতে কমপক্ষে ৫০ জন, ২০১৬ সালের ২১ মের ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আঘাতে ২৪ জন, ২০১৭ সালের ৩০ মের ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ৬ জন, ২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ৯ জন, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল-এর আঘাতে ২৪ জন প্রাণ হারায় এবং সাম্প্রতিক ২৫ মে আঘাত হানা ইয়াসের আঘাতে প্রাণহানি খুবই নগন্য। তবে সবগুলো ঝড়েই ফসল এবং কাঁচা বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷

উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিগত তিন চার দশক আগে এ ধরনের দুর্যোগে যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যেত, সেখানে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতার কারণে এখন প্রাণহানির সংখ্যা খুবই হাতেগোনা। সবশেষ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে এখনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ স্টাডি এন্ড রিসোর্স এর পরিচালক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সচেতনতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুর্যোগ প্রস্তুতির তথ্যও দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সাফল্য।

আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ আর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সার্বিক তরিৎ পরিকল্পনার কারণে প্রাক প্রস্তুতি ছিল অনেকটাই ভালো। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা মোকাবেলায় অনেক সক্ষমতা অর্জন করায় বিশ্বে বাংলাদেশের এই সক্ষমতা বেশ প্রশংসিত ও রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে।#

342/