আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লেবাননের খ্রিস্টান লেখক, কবি ও সাহিত্যিক মিশেল কা‘দি বলেন, হযরত ঈসা (আ.)-এর থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের বহু সুসংবাদ উল্লেখ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যখন হযরত ঈসা (আ.) এই সুসংবাদের মাধ্যমে নিজের রিসালাতকে অব্যাহত প্রক্রিয়া বলে উপস্থাপন করন।
হযরত ঈসা (আ.) নবীজির আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন যে, তাঁর পরবর্তীতে নৈতিক মূল্যবোধ খাতমুন নাবিয়্যীন (সা.)-এর আগমনের মাধ্যমে অব্যাহত থাকুক।
মিশেল কা‘দি (জন্ম ১৯৪৪) লেবাননের খ্রিস্টান লেখক, কবি ও সাহিত্যিক। তিনি আরব বিশ্বের বিরল ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের একজন যিনি নিজের চিন্তাজীবনকে আহলে বাইত (আ.)-এর লেখনী ও প্রচারের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
একজন খ্রিস্টান চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি আহলে বাইতকে “ক্বদিস” (পবিত্র) ও “আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি” মনে করেন। তিনি ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর গভীর আধ্যাত্মিক বিষয়ে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
এই অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে এবং তার রচনাবলী ধর্মীয় আন্তঃসংলাপ ও চিন্তাগত ঐক্যের এক উজ্জ্বল নমুনা হিসেবে পরিচিত।
আহলে বাইত (আ.) ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের প্রতি গভীর মনোযোগ সত্ত্বেও মিশেল কা‘দি একজন খাঁটি খ্রিস্টান হিসেবে হযরত ঈসা মাসিহ (আ.) ও খ্রিস্টধর্মের শিক্ষার প্রতি এক অনন্য ও গভীর দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন যা শুধু কথাবার্তার সীমা অতিক্রম করে।
তিনি হযরত ঈসা (আ.)-কে শুধু একজন নবী হিসেবে নয় বরং উচ্চতর মারেফাত ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখেন, যা ইসলামে আল্লাহর ওলিদের প্রতি তার শ্রদ্ধার সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল তৈরি করে। তার লেখায় খ্রিস্টধর্মকে একটি সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যার মূলে রয়েছে সত্যের অনুসন্ধান ও খাঁটি নৈতিকতা।
এটি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সহায়তা করে, যেখানে ভালোবাসা ও ত্যাগ সকল আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের রিসালাতের মূল অক্ষ।
মিশেল কা‘দি আরও বলেন: আমি স্বীকার করছি যে, আমি হযরত ঈসা (আ.)-কে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে চিনেছি—পশ্চিমা লোকেরা তাঁকে জাল ইঞ্জিলের বর্ণনায় যেভাবে চিত্রিত করেছে বা তাঁর সম্পর্কে সন্দেহ ও শঙ্কার গল্প পড়ার আগেই। আমি কুরআন সাতবার পূর্ণ পড়ার পর বুঝেছি যে, আল্লাহ হযরত মসীহ সম্পর্কে বলেছেন তিনি শান্তির রাসূল ও পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত।
তিনি ব্যাখ্যা করেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হযরত ঈসা (আ.)-উভয়ের ব্যক্তিত্ব আল্লাহর ঐশ্বরিক সত্ত্বা থেকে উৎসারিত এবং পৃথিবীতে প্রেরিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরা মারিয়ামের ৩৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন: «وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا» অর্থাৎ “আমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।” এই আয়াত সুন্দরভাবে বর্ণনা করে যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম পবিত্র ও পরিশুদ্ধ ছিল—যেমনটা খ্রিস্টধর্মে বলা হয়। এই ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি যে, ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মূল এক এবং উভয় ধর্ম একই পথের।
এই লেবাননি লেখক দুই মহান নবী হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মানব গঠন ও আল্লাহর মূল্যবোধভিত্তিক প্রকৃতি গড়ে তোলার রিসালাতের কথা উল্লেখ করে বলেন: হযরত ঈসা (আ.) জন্মের পর থেকেই মানুষের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত হন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে কথা বলতে শুরু করেন। ঠিক তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-ও তাঁর ওপর অবতীর্ণ আয়াতের মাধ্যমে মানুষের জন্য রিসালাত বর্ণনা করেন। অতএব ঈসা (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.) উভয়ই আল্লাহর মনোনীত ও নির্বাচিত বান্দা যাঁরা মানবতাকে তার সকল অর্থ ও বিস্তারিত বিষয়সহ উপস্থাপন করেছেন।
মিশেল কা‘দি বলেন: কুরআন ও ইঞ্জিল উভয়ই আসমানী গ্রন্থ যা মানব গঠন ও মানবীয় মূল্যবোধের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে পরিপূর্ণ। এই দুই গ্রন্থের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো পরস্পরের প্রতি সম্মান ও বোঝাপড়া যাতে মানুষকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো।
উভয় নবীই মানুষকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানের উদ্দেশ্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে । উভয়ই নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন—যেমন ইসলামেও এই অর্থ রয়েছে।
মিশেল কা‘দি পরিশেষে বলেন: ইসলাম ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের রিসালাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা উচিত নয় কারণ উভয়ের লক্ষ্যস্থল হচ্ছে এক যেমন কুরআনে সূরা কাহফের ১১০ নম্বর আয়াতে আছে:
«قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا»
অর্থাৎ:বলুন, "আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, কিন্তু আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র উপাস্যকারী। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।"
Your Comment