‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

১১ জুলাই ২০২৩

৫:৪৩:৩৯ PM
1378763

মুসলিম বিশ্ব ঐক্যের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চার করে থাকে / যুবকদের উচিত আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে নিজেদের ঈমান মজবুত করা : আয়াতুল্লাহ রামাজানী

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা (মাজমা)’র মহাসচিব এবং তার সাথে থাকা একটি প্রতিনিধি দল, শিয়া ও সুন্নি ইসলামী চিন্তাবিদগণের উপস্থিতিতে পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত ফাতিমা জাহরা (সা.) শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত ‍“উম্মতের ঐক্য” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা (মাজমা)’র মহাসচিব এবং তার সাথে থাকা একটি প্রতিনিধি দল, শিয়া ও সুন্নি ইসলামী চিন্তাবিদগণের উপস্থিতিতে লাহোরে অবস্থিত ফাতিমা জাহরা (সা.) শিক্ষাকেন্দ্রে আয়োজিত ‍“ইত্তেহাদে উম্মাত” শীর্ষক এক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

আয়াতুল্লাহ রামাজানী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন: আহলে বাইত (আ.) তাদের সময়ে ঐক্যের মাপকাঠি ছিলেন। বর্তমানে ইসলামী বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঐক্য; যার মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সক্ষমতা অর্জন করতে পারি।

তিনি আরও বলেন: কুরআন সকল মুসলমানের অনুধাবনের উৎস, পয়গম্বর (সা.) হলেন সকল মুসলমানের নবী। আমরা মনে করি যে, আহলে বাইত (আ.) হলেন উম্মতে ইসলামীর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু; আজকে শত্রুরা কুরআন, রসুল (সা.) ও আহলে বাইত (আ.)-এর অবমাননা করতে ষড়যন্ত্র করছে। আর তাই আমাদের উচিত ঐক্য গঠনের মাধ্যমে এমন একটি শক্তি সঞ্চার করা যাতে কোথাও আমাদের ইসলামের পবিত্র বিষয়বস্তুর অবমাননা না হয়। আর অবমাননাকর ঘটনা ঘটলে, অবমাননাকারী যেন নিরাপদে না থাকতে পারে সেই পরিস্থিতি তৈরি করা, যেরূপ সালমান রুশদী অবমাননা করার পরে হজরত ইমাম খোমেনী (রহ.) ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ‍“সে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে না।”

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব ইরানের ইসলামী বিপ্লব এবং মুসলিম সমাজে নেতার বিদ্যমান থাকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন: অত্র শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়; জনগণ দ্বীনের জন্য বিপ্লব ও আন্দোলন করেছিল। ইমাম খোমেনী (রহ.) নিজের পথের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি ইসলামকে ধর্ম সগৌরবে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়েছেন। বর্তমানে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এই পথকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি বিশ্বের অত্যাচারীদের মোকাবেলাকারী অন্যতম নেতা।

‍“পবিত্র কুরআনে জিহাদ হল দ্বীনের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা” উল্লেখ করে তিনি বলেন: ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার উপর ইমাম খোমেনীর গুরুত্বারোপ করা, ইসলামী বিশ্বে এর অগ্রাধিকারকে প্রমাণ করে। কারণ এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অপরাধী হল জায়নবাদীরা এবং তারাই সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেছে। তাই মুসলমানদের উচিত ঐক্যবদ্ধ ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কুদসকে মুক্ত করণে পদক্ষেপ নেয়া।

শত্রুদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন:  আজ ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এজন্য মুসলিম নেতাদের এই ষড়যন্ত্রের সম্মুখে বাধা সৃষ্টি করতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমারা অবস্থা পরিবর্তন, ইসলামের বিধি-বিধান বন্ধ এবং তরুণদের দ্বীনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। অতএব তরুণদের উচিত দ্বীনের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে নিজেদের ঈমানকে মজবুত করা।

তিনি আরও বলেন: আজ পশ্চিমারা ইসলাম ও কুরআনকে আঘাত করতে চেষ্টা করছে এবং একমাত্র ইসলামই এই পশ্চিমাদের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, দ্বীন ইসলাম ও পবিত্র কুরআন হল পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং মুসলমানদেরও নানাবিধ বিষয়ে সামাজিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

হাউযা ইলমিয়ার উচ্চতর স্তরের এই শিক্ষক বলেন: ইসলামী সমাজের সবচেয়ে বড় বিপদ হল অজ্ঞতা, আর ইমাম হুসাইন (আ.) এই অজ্ঞতাকে ধ্বংস করতেই শাহাদাত বরণ করেন।

এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের আহলে সুন্নতের অন্যতম প্রবীণ মুফতি আশিক হোসেন, দেশটিতে আয়াতুল্লাহ রামাজানীর উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন:  আমরা সুইডেনে কুরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা জানাই। ঈদুল আযহার দিনে এমন নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে রাগান্বিত ও শোকাহত করেছে। ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য চায় না এবং তারা বিভক্ত করার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করতে চায়। তাই সকল মুসলমানকে বিশেষ করে বিশ্বের আলেম সমাজ ও ইসলামী চিন্তাবিদগণকে ঐক্য ও সংহতির রক্ষার মাধ্যমে মুসলিম বিরোধী শয়তানী চক্রান্তকে রুখে দিতে হবে।

ঐরূপ এই বৈঠকে মুহাম্মদ শরিফ গুজার বলেন: এই বৈঠকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এই বার্তা ছড়িয়ে যাবে যে, পাকিস্তানের ধর্মীয় আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন: ইরান ও সৌদি আরবের বন্ধুত্ব হল কাফেরদের জন্য মৃত্যু এবং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে নতুন সম্পর্ক, সমগ্র অঞ্চলে নতুন ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

ধারাবাহিকতায় মুফিত মুবাশশির নেজামি বলেন: এ ধরনের বৈঠক আলেম সমাজ ও মুসলমানদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি ঘটাবে এবং এটিই প্রকৃত ইসলাম। যদি সবাই একত্রে এ দিকে অগ্রসর হয়, তবে কুফরের জগত ধ্বংস হয়ে যাবে।

এই অনুষ্ঠানে আহলে হাদিসের আলেম মাওলানা শাকিলুর রহমান বলেন: আমরা সকলেই মুসলমান এবং কলেমা ‍“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করি এবং শিয়াদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে চেষ্টা করি।

তিনি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলেন: ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে নতুন সম্পর্ককে প্রত্যেক মুসলমান স্বাগত জানিয়েছে এবং পাকিস্তানও এই সম্পর্কে প্রভাবিত হচ্ছে।

হাফেজ কাজেম রেজা নাকাভী বলেন: পাকিস্তানে ফাতিমা জাহরা মসজিদ (সা.) নামক একটি মসজিদ ধ্বংস হয় এবং আমরা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের মাধ্যমে এটি পুনর্নির্মাণ করেছি। একইভাবে আমরা মাদ্রাসা-এ জায়নাবিয়াহ তৈরি করেছি এবং মূলতঃ এই কাজগুলি মুফতি আশিক হোসেন এবং আল্লামা ইফতেখার নাকভির মধ্যে ঐক্যের ফসল।

ধারাবাহিকতায় আল্লামা শেইখ শাব্বির হাসান মিসামী বলেন: মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিতে লাহোরের আলেমদের কার্যকর ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। ইমাম খোমেনী (রহ.) যিনি উম্মতের মধ্যে ঐক্যের বীজ বপন করেছিলেন, সেই ঐক্য আজ একটি বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়েছে এবং আজ উপনিবেশকারী ও বৃহৎ শক্তিগুলোর মাথা নুইয়ে গেছে।

তিনি ইমাম খোমেনী (রহ.)-কে ইসলামী উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করে সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর বিষয়ে বলেন: পবিত্র কুরআনের অবমাননা কোন বাক-স্বাধীনতার উদাহরণ হতে পারেনা, বরং তা সহিংসতা ও ঘৃণা ছড়ায় এবং ইসলামফোবিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা করে।

একইভাবে আল্লামা সৈয়দ ইফতেখার হোসেন নাকাভী বলেন: ইমাম (রহ.) মুসলমানদেরকে যে পথ দেখিয়েছিলেন, তা ছিল ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা এই পথকে অব্যাহত রেখেছেন। ইন শা আল্লাহ, খুব শীঘ্রই আমরা বায়তুল মুকাদ্দাসে রাহবার ইমাম খামেনায়ীর নেতৃত্বে নামাজ আদায় করব।#176