‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

৩ অক্টোবর ২০২৩

৬:৪৪:৪৫ PM
1397638

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) শীয়াদেরকে পথ-নির্দেশনার পাশাপাশি নিজ সন্তানের জীবন রক্ষায় ছিলেন দায়িত্বশীল : আহমাদ কাচ্ছায়ী

ইসলামিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক আহমাদী কাচ্ছায়ীর বলেন: ইমাম হাসান আসকারীকে (আ.) মূলতঃ শীয়াদের দিক নির্দেশনা প্রদানসহ নিজ সন্তানের জীবন রক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। তবে ইমামতের গুরু-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি দ্বিতীয় বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কারণ ঐ পরিস্থিতিতে শীয়া মাযহাবের টিকে থাকাটা ছিল মূলতঃ ইমামে জামানের (আ.) জীবন রক্ষার উপর নির্ভরশীল।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা-সংস্থা (আবনা): আবনা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার কনফারেন্স রুমে, ‍“বিরোধীদের বিপরীতে ইমাম মাহদীর (আ.) জীবন রক্ষায়, ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) কলা-কৌশল” শিরোনামে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ঐ বৈঠকে, ইসলামিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক হুজ্জাতুল-ইসলাম ডঃ মাজিদ আহমাদ কাচ্ছায়ী বলেন: ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) ইমামতের সময়কাল ছিল মাত্র ৬ বছর। তিনি এই স্বল্প সময়ে বহু উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়ে ছিলেন।

নবী ও রসূলগণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি আরো বলেন: আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সকল ব্যক্তি মানুষের হেদায়েতের বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন এবং অবিচলতা ও দৃঢ়তার সাথে তারা এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়। তিনি ইমামতের গুরু-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কারণ ইমামে জামানের (আ.) জীবন রক্ষার বিশেষ দায়িত্ব ছিল ইমাম আসকারীর (আ.) উপর; যেহেতু জনসাধারণের নেতৃত্ব দেওয়া এবং ইমামে জামানের জীবন রক্ষার মধ্যে একটিতে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি স্বাধীন ছিলেন, তাই ইমামত ইসলামের মূলনীতির অন্যতম অংশ হওয়ার কারণে এবং বলতে গেলে, ইমাম না থাকলে তাঁর অনুসারিদের নাম পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে না বলে ইমাম হাসান আসকারী (আ.) তাঁর ঐশী-প্রজ্ঞার আলোকে দ্বিতীয় বিষয়টির উপর বেশী গুরুত্ব দেন।

তিনি আরো বলেন: ইমাম আসকারীর (আ.) শাহাদাতের পর, গাইবাতে-ছোগরার সময়ে শীয়ারা চৌদ্দটি ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ঐ পরিস্থিতি মুকাবেলা করতেই মূলতঃ ইমামে জামানের (আ.) গাইবাতে-কোবরার যুগ তখনই শুরু হয়নি। তিনি ঐ সময়ে শীয়াদেরকে সমাজিক ভাবে একতাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) সমসাময়িক অবস্থার কথা উল্লেখ করে এই সহকারী অধ্যাপক বলেন: ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়েছে যে, আব্বাসীয়রা ইমামে-জামানকে (আ.) হত্যার সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, এমনকি এই উদ্দেশ্যে ইমাম হাসান আসকারীকে (আ.) স্থানান্তর করে সমেররা শহরের একটি সেনা-নিবাসে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

অন্যদিকে, ইমাম হাসান আসকারীকে (আ.) স্বাভাবিক জীবনধারার বস্তুগত নিয়মের মধ্যে থেকেই, জনসাধারণের হেদায়েতের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ইমামে জামানের জীবন রক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ ইমামদের (আ.) দায়িত্ব পালন কোন মোজেজা বা অলৌকিক ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ছিল না।

ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) সন্তান জন্মের পূর্বের অবস্থা বর্ণনা করে আহমাদ কাচ্ছায়ী বলেন: শীয়াদের ১১তম ইমাম হাসান আসকারী (আ.) তাঁর নিকটতম লোকদের কাছ থেকেও ইমামে জামানের (আ.) জন্মের বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিলেন! এমনকি, ইমাম হাসান আসকারীর ফুফুআম্মাও হযরত মাহদীর (আ.) জন্মগ্রহণের রাত পর্যন্ত ইমামে জামানের (আঃ) জন্ম লাভের বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

এছাড়া, হযরত মাহদী (আ.) জন্ম গ্রহণের পর, ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) অল্প কয়েক জন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ব্যতিত, তাঁর জন্ম সম্পর্কে কাউকেই কিছু জানানো হয়নি। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, সেই সময়কার বিরাজমান পরিস্থিতি কত কঠিন ও ভয়াবহ ছিল।

ইমামে জামানের (আ.) জন্ম সংশ্লিষ্ট হাদীসের সংখ্যা এত কম কেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ অধ্যাপক বলেন: তৎকালিন সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে ইমামের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কার কারণেই মূলতঃ তাঁর জন্ম সংশ্লিষ্ট হাদীসের সংখ্যা এত কম। এমনকি ইতিহাসে ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) কোনো আনুষ্ঠানিক বিবাহের কথাও উল্লেখ নেই এবং ইমামে জামানের (আ.) মায়ের জাতীয়তা সম্পর্কেও ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এই সব কিছুর পিছনের কারণ হচ্ছে, ইমাম হাসান আল-আসকারীর (আঃ) সেই কৌশলগত প্রচেষ্টা। আর তিনি এসব করেছিলেন- কায়েমে আলে মুহাম্মাদ সম্পর্কে আব্বাসীও খলিফাদেরকে বিভ্রান্ত রাখার জন্য।

শীয়া ইতিহাসের এই গবেষক ইমাম আসকারীর (আঃ) একটি উপদেশ উল্লেখ করে বলেন: ইমাম পরামর্শ দিয়েছিলেন- তখনকার দিনে শীয়ারা যেন ইমামে জামানের (আ.) নাম উল্লেখ করে সম্মোধন করা থেকে বিরত থাকে। এই কৌশলের পিছনেও উদ্দেশ্য ছিল, যাতে আব্বাসীয়রা ইমামের জন্ম ও অস্তিত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ করতে না পারে।

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীদের এই প্রচেষ্টার ফল এমন পর্যায়ে পৌঁছে ছিল যে, আব্বাসীয়রা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হয়ে ছিল যে, হযরত মাহদী (আ.) নামে আদৌ কোন ব্যক্তির বাস্তব অস্তিত্ব নেই।#