১৩ জুলাই ২০২৫ - ২১:১২
প্রযুক্তিতে অগ্রগতির পথে ইরানি নারীরা

ইরানি নারীরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ইভেন্টে দারুণ সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। তাদের দক্ষতা পুরো বিশ্বই দেখেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে এবং জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে দুর্দান্ত অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে ইরানি নারীরা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে তারা এই বার্তা দিচ্ছেন, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই 'প্রযুক্তি' ক্ষেত্রেও তাদের উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


ইরানি ক্যালেন্ডার ১৪০০ (২০২১-২০২২) সালে নারী ব্যবস্থাপকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া চলতি ইরানি বছরের প্রথম নয় মাসের শেষে এই সংখ্যা ১ হাজার ৯২ জন থেকে বেড়ে ২ হাজার ২৫০ জনে দাঁড়িয়েছে।

তবে, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে দেশটিতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে নেতৃস্থানীয় নারীদের উপস্থিতি বাড়লেও গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র, বেসরকারি ক্ষেত্র এবং প্রযুক্তিগত ব্যবসায় পুরুষদের তুলনায় তারা উল্লেখযোগ্য পিছিয়ে রয়েছে।

আধুনিক, প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলির মাত্র ১২ শতাংশ ইরানি নারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। অধিকন্তু, জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানিগুলির পরিচালনা পর্ষদের ২৭ হাজার ২৩৭ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ১৫৪ জন নারী, যা মোট সদস্যদের ১৯ শতাংশ।

সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ইভেন্টে, আজম কারামি, মাহভাশ আবিয়ারি, মারজি ইব্রাহিমি এবং ফাতেমে হোসেইনি নামে চারজন ইরানি নারী ইতিহাস রচনা করেছেন। তারা ব্রিকস উদ্যোক্তা ফোরামের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি 'ব্রিকস নারী স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা ২০২৪'-এর বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন। প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক বিচারক প্যানেল ৩০টি দেশের হাজারের অধিক আবেদন বিবেচনা করেছে।

প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে ২৬টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল যেমন জ্বালানি ও অবকাঠামোগত সুবিধায় উদ্ভাবন; চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি এবং বিমান শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি; ক্যান্সার এবং বন্ধ্যাত্বের বিরুদ্ধে লড়াই; এবং রোবোটিক্স। স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর সংখ্যার দিক থেকে ইরানি মহিলারা রাশিয়ার পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

আজম কারামি বৈদ্যুতিক প্রকৌশল (টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম) বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। তিনি একটি জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি পরিচালনা করছেন যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ড্রোন এবং রিমোট সেন্সিং, বুদ্ধিমান পর্যবেক্ষণ, ডেটা মাইনিং এবং ইন্টারনেট অফ থিংসের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিষেবা প্রদান করে এবং পণ্য বিকাশ করে।

ফাতেমে হোসেইনি একটি জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানির ব্যবস্থাপক। তার কোম্পানি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের জীবন উন্নত করার জন্য নতুন পণ্য তৈরি করে।

জ্ঞানভিত্তিক এই কোম্পানিটির পণ্য ইন্টেলিজেন্ট স্পুন ফর ট্রেমার অ্যালিভেশন (আইএসটিএ) মোশন সেন্সর এবং একটি বুদ্ধিমান উচ্চ-গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কম্পন কমিয়ে কম্পন আক্রান্ত রোগীদের স্বাধীনভাবে এবং চাপ ছাড়াই খেতে সাহায্য করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে ইরান তৃতীয় দেশ যেখানে এই প্রযুক্তি রয়েছে।

মারজিহ ইব্রাহিমি একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। তার বিজয়ী প্রকল্পের শিরোনাম ছিল 'ক্যান্সার এবং অটোইমিউন রোগের চিকিৎসার জন্য ইমিউন সেল ব্যাংক'। প্রাকৃতিক ঘাতক (এনকে) কোষ রূপান্তরিত বা অকার্যকর কোষ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে।

মাহভাশ আবিয়ারির স্টার্টআপ প্রকল্পটি ছিল 'ইনসাইটফুলি স্ক্যানড গ্লুকোজ মনিটরিং'। প্ল্যাটফর্মটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে রোগীর আচরণ বিশ্লেষণ করে, রোগীদের জন্য আরও লক্ষ্যবস্তু প্রেসক্রিপশন তৈরিতে ডাক্তারদের প্রতিবেদন সরবরাহ করে।

একটি জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানির ব্যবস্থাপক নাফিসে হাতামি একটি ‘ব্যাপক ডিজিটাল প্রমাণীকরণ প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করেছেন।

সর্বাধিক যুগোপযোগী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এই জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানিটি খুব দ্রুত ব্যবসার জন্য ডিজিটাল প্রমাণীকরণ এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর বাস্তবায়নে সফল হয়েছে এবং ইরানে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং ডিজিটাল রূপান্তর গড়ে তুলেছে।

Your Comment

You are replying to: .
captcha