‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

৭:২২:০৬ PM
1434869

 গাজা যুদ্ধে বিজয় ইসরায়েলের জন্য একটি নিষ্ফল প্রচারণামূলক স্লোগান : হাআরেটজ

একটি হিব্রুভাষী মিডিয়া, নিজের সন্তানদেরকে আমেরিকায় পাঠিয়ে বাকি ইসরায়েলিদেরকে গাজা যুদ্ধে পাঠানো জায়নবাদী কর্মকর্তাদের অনর্থক বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছে, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিজয়, কোনটিরই সম্ভাবনা নেই।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): কোন লক্ষ্য ছাড়াই গাজা যুদ্ধ অব্যাহত রাখা এবং বিশেষ করে এখনো ইসরায়েলি বন্দীদের গাজায় অবস্থান করাকে কেন্দ্র করে জায়নবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিন দিন ব্যাপক হচ্ছে, এমতাবস্থায় জায়নবাদী এক গণমাধ্যম একটি নিবন্ধে প্রকাশ উল্লেখ করেছে যে, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের জয়ের কোন সম্ভাবনা নেই।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের নিষ্ফল উদ্দেশ্যের বলি হচ্ছে তরুণরা

এ বিষয়ে হিব্রুভাষার সংবাদপত্র হাআরেটস উল্লেখ করেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিজ সন্তানদেরকে বিদেশ পাঠিয়ে, ইসরায়েলি পরিবারগুলোকে তাদের সন্তানদেরকে গাজার মৃত্যুকুণ্ডে যুদ্ধে পাঠাতে বলছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুত্র ইয়াইর নেতানিয়াহু মায়ামিতে তার নিজস্ব ভিলায় জীবনযাপন করছে এবং কখনোই তাকে খান ইউনুসে (গাজার দক্ষিণাঞ্চলে) মৃত্যুবরণ করতে দেখা যাবে না। অথচ তার পিতা বলে, আমাদের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এর অর্থ এমন যে, ইসরায়েলি পরিবারগুলোর সন্তানদের মরতে হবে, যাতে আমেরিকায় থাকা পুত্রের পিতা নেতানিয়াহু তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

এই নিবন্ধে বলা হয়েছে, এ সপ্তাহে ইয়াইর নেতানিয়াহু মায়ামিতে নিজের বিলাসবহুল ভিলায় ফিরে গেছে। অন্যদিকে জায়নবাদী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট’ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সের সাথে যুক্ত হয়ে যুদ্ধ না করে, শিকাগোতে নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্যালান্ট যখন গাজা উপত্যকায় তীব্র আক্রমণ করার কথা বলে, তখন সে সেনাদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের কবিতা শোনায়, এর অর্থ হলো তার নিজের সন্তান সম্পূর্ণ নিরাপদ থাক, আর বাকি ইসরায়েলি যুবকেরা জীবন বাজি ধরুক।

ঐ নিবন্ধের ভিত্তিতে, সন্তানকে আমেরিকায় পাঠানো নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করা একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ। তিনি মূলতঃ বলতে চাইছেন, যুদ্ধ অব্যাহত রাখা অন্যান্য ইসরায়েলি যুবকদের দায়িত্ব।

এই জায়নবাদী মিডিয়া সুস্পষ্ট করে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য অসহনীয় এবং এর চেয়ে বেশি ঔদ্ধত্য পূর্ণ কথা আর হতে পারে না যে, তারা সেই সকল পরিবারের পক্ষে কথা বলবে, যাদের সন্তানরা যুদ্ধে নিহত হয়েছে; অথচ এই সকল কর্মকর্তাদের সন্তানরা বিদেশে পূর্ণ নিরাপত্তায় থাকবে। অন্যদিকে, কর্মকর্তারা বলছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে; তা না হলে যুদ্ধে ঝরে যাওয়া ইসরায়েলিদের রক্ত বৃথা যাবে।

‘গাজা যুদ্ধে বিজয়’ ইসরায়েলের জন্য একটি নিষ্ফল প্রচারণামূলক স্লোগান

হাআরেটজ আরও লিখেছে, ইসরায়েলি নেতাদের এই যুক্তি সম্পূর্ণ নিষ্ফল এবং অযৌক্তিক। মূলতঃ তারা বলতে চাচ্ছে, শুধুমাত্র আরও বেশি সংখ্যক ইসরায়েলি হত্যার মাধ্যমে গত কয়েক মাসের যুদ্ধে বলিদানকারীদের মৃত্যু সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। সম্পূর্ণ বিজয় শুধুমাত্র একটি নিষ্ফল প্রচারণামূলক স্লোগান এবং কোনরূপেই এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। ৭ অক্টোবর বড় আঘাত পাবার পর থেকে, ইসরায়েলের আর সম্পূর্ণ বা আংশিক, কোন ধরনের বিজয়ের সুযোগ নেই।

এই নিবন্ধে গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, প্রায় সকল বিবেকবান ব্যক্তি জানেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বিপরীতে সামরিক প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যুদ্ধে জড়ানো এবং যুদ্ধ অব্যাহত রাখা কোন পবিত্র কাজ নয় এবং কোন ক্রমেই অধিক ইসরায়েলির মৃত্যু বা বন্দী হওয়ার পিছনে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকতে পারেনা। গাজার অধিকৃত একটি শহরে সেনাবাহিনীর অবস্থান তাদেরকে ক্লান্ত ও নির্জীব করে ফেলবে এবং পরবর্তীতে তারা হামাসের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

ইসরায়েলের একমাত্র বিজয় হবে নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভার উৎখাত

হিব্রু ভাষাভাসি এই মিডিয়া আরও লিখেছে, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত কোন যুদ্ধেই ইসরায়েলে এত বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখ হয়নি। বাস্তবতা হল, ইসরায়েলি সেনারা গাজায় আর কোন কিছুই করতে পারবে না। তারা যতটা সম্ভব এই অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। আর যদি এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে কোন ফল হস্তগত হওয়ার কথা থাকত তাহলে এতদিনে তা সুস্পষ্ট হয়ে যেত।

হাআরেটজের এই প্রবন্ধের শেষাংশে বলা হয়, ইসরায়েলের এখন যা করা উচিত তা হল, গাজা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা এবং নিজেদের বন্দীদের মুক্তি করানো। একমাত্র সম্পূর্ণ বিজয় যা অর্জনে আমরা আশাবাদী, তা হল এই মন্ত্রীসভার অপসারণ, যারা ইসরায়েলিদের জন্য বিপর্যয় ও ধ্বংস ছাড়া কিছুই নিয়ে আসেনি।#176A