‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

৪ এপ্রিল ২০২৪

১:৪৬:২৪ PM
1448179

ইরানের রাষ্ট্র-ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামিক রিপাবলিক নির্ধারণে গণভোটের বার্ষিকী: ৫টি স্মরণীয় দিক

১২ ফারভারদিন বা পয়লা এপ্রিল ইরানের ইসলামী রিপাবলিক বা ইসলামী জন-শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দিবস। এ দিবস মহান ইরানি জাতির জাতীয় গৌরব ও ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলনের দিন। বিপ্লবী ইরানি জাতি ৪৫ বছর আগে এ দিনে তাঁদের দেশের ভাগ্য নিজের হাতেই নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিলেন।

অন্য কথায় এই দিন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইরানের মহান জাতির সংগ্রামের ফসল। এই বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার কয়েকটি স্মরণীয় দিক বা প্রসঙ্গ লক্ষণীয়:

১.অস্থায়ী সরকার গঠন

 ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে গণ-জোয়ারে ভাস্বর ইরানের ইসলামী বিপ্লব। ১ ফেব্রুয়ারি ১৫ বছরের নির্বাসনের জীবন শেষ করে মাতৃভূমি ইরানে ফিরে এসেছিলেন বিপ্লবী এ জাতির সবচেয়ে জনপ্রিয় অবিসম্বাদিত নেতা ইমাম খোমেনী (র)। এর ৫ দিন পরই ইমামের এক ডিক্রি বা নির্দেশে অস্থায়ী সরকার গঠনের দায়িত্ব নেন ইঞ্জিনিয়ার ব'জারগ'নি। আর এই সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ছিল দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্র-ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য গণভোটের আয়োজন করা। বিশ্ব-ইতিহাসে এটি ছিল একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

২.ইসলামী রিপাবলিক-ব্যবস্থা নির্বাচন

অবশেষে ৩০ মার্চ এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র চায় কিনা জানতে চেয়ে এই গণভোটের আয়োজন করা হয়। এতে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিলো। এরপর ১ এপ্রিল ১৯৭৯ ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছরের ১ এপ্রিল ইরানে পালিত হচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র দিবস।

৩.ইমাম খোমেনির বাণী

ইমাম খোমেনী এক বাণীতে এই ঐতিহাসিক ও চিরস্থায়ী বীরত্ব-গাঁথার ঘটনার দিনটিকে জাতির বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসবের অন্যতম বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেছিলেন, এই দিন তথা ১ এপ্রিল প্রথম খোদায়ী সরকার প্রতিষ্ঠার বা আল্লাহর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন। এ দিন উদযাপন করা ও জীবন্ত করে রাখা জাতির কর্তব্য। এই দিনে ২৫০০ বছরের পুরনো খোদাদ্রোহী বা তাগুতি শাসনের স্তম্ভগুলো ও শয়তানী কর্তৃত্ব চিরতরে ধসে পড়েছে তথা শয়তানের রাজত্ব চিরদিনের জন্য উৎখাত হয়েছে এবং শুরু হয়েছে মজলুমদের তথা বঞ্চিতদের খোদায়ী শাসন-ব্যবস্থা যে রাজত্ব আল্লাহর রাজত্ব। আল্লাহ তাআলা আমাদের অনুগ্রহ করেছেন, তাঁর শক্তিশালী হাত দিয়ে জালিম শাসককে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহর শক্তিই বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণী তথা মুস্তাজআফদের শক্তি। তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র কায়েম করে দিয়ে ইরানী জাতিকে তাদের ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকার দান করেছেন।

৪.ইসলামী রিপাবলিক বলতে যা বোঝায়

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর এ বিপ্লবের স্থপতি ও নেতা ইমাম খোমেনি (র) একই রাষ্ট্রে আল্লাহর ও জনগণের অধিকারের নীতি বাস্তবায়নযোগ্য ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। আর এ বিষয়টিই তিনি ইসলামিক রিপাবলিক-ব্যবস্থা বা জমহুরি ইসলামী ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন যা জনগণ ও চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 'জমহুরি' শব্দের অর্থ জন-সমষ্টি বা জনগোষ্ঠী। ইসলামী বিপ্লবের পর রাষ্ট্র-ব্যবস্থার জন্য এ ধরনের শব্দ নির্বাচন এই বিপ্লবের জনমুখিতা বা গণ-ভিত্তিক হওয়ার বিষয় তুলে ধরে এবং এ থেকে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে জনগণের রায় বা ভোটের প্রভাবের বিষয়টিও স্পষ্ট। আর 'ইসলামী' শব্দটির ব্যবহারও অন্যান্য রিপাবলিক-ব্যবস্থা থেকে একে ভিন্নতা দিয়েছে। এ থেকে রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর ওপর খোদায়ী ও কুরআনি মূল্যবোধের কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়।

ইসলামী রিপাবলিক বা ইসলামী জনসাধারণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকের রায় ও মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং মুসলিম জনগণের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ইসলামী আদর্শগুলো বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট হন। এইসব আদর্শ সমাজের সৌভাগ্যের মাধ্যম।

ইমাম আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী মরহুম ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনীর পর ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামী রিপাবলিক বা  ইসলামী জনসাধারণতন্ত্র শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন: জমহুরি ইসলামীর আক্ষরিক অর্থ দুটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত: একটি হল জমহুরি তথা দেশের জনগণ যারা রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা এবং দেশের ব্যবস্থাপকদের নির্বাচন করেন। আর অন্যটি হল ইসলামী। অর্থাৎ জনগণের এই তৎপরতা ইসলামী চিন্তা ও ইসলামী আইন-ভিত্তিক। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। যে দেশের প্রায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান এবং ইসলামের প্রতি গভীর বিশ্বাসী ও নিবেদিত-প্রাণ কর্মী হিসেবে যুগে যুগে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন সেই দেশের রাষ্ট্র জন-ভিত্তিক বা গণ-ভিত্তিক হওয়ার পাশাপাশি ইসলামীও বটে।  

 ৫.বিশ্বের ওপর প্রভাব

১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল (ফার্সি ১৩৫৮ সনের ১২ ফারভারদিন) ইরানে ইসলামী রিপাবলিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার বিষয়টি বিশ্বের মজলুম জাতিগুলোর মধ্যে নতুন চিন্তাধারা ও কর্মতৎপরতার মুকুল বা কুড়ি ছড়িয়ে দেয় ও সেসব বিকশিত বা প্রস্ফুটিত হতে থাকে। ইসলামী বিপ্লব তাদেরকে পশ্চিমা মডেলগুলো ও কমিউনিস্ট মডেলগুলোর দিক থেকে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার ও ধর্মের দৃঢ় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মডেলের দিকে অনুপ্রাণিত করে বেশ জোরালোভাবে। এতদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত ওই মডেলগুলোর ব্যর্থতায় তারা হতাশ হয়ে পড়েন। বিশ্বের মজলুম ও বঞ্চিত জাতিগুলো বুঝতে পেরেছে যে একত্ববাদী ধর্মের শিক্ষার ভিত্তিতে ও জাতীয় ইচ্ছার ভিত্তিতে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং জনগণের পছন্দের গণ-ভিত্তিক রাষ্ট্র বা সরকার গড়ে তোলা সম্ভব যেমনটি ঘটিয়েছে ইরানি জাতি। পবিত্র কুরআনে দাম্ভিক ও বলদর্পিদের ওপর মজলুমদের বিজয়ের যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে এই বিপ্লব তারই সুসংবাদ দিচ্ছে। #

342/