৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে, পশ্চিমাদের পূর্ণ মদদে, ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের অসহায় ও নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে নতুন করে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। এই ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ন্যারেটিভগুলো সংরক্ষণ করা আগের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ববহ। মেহর বার্তা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক রশিদ মাশরাভি গাজায় ২২টি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ সম্পর্কে বলেছেন: প্রাথমিক ধারণাটি ছিল ব্যক্তিগত না বলা গল্পগুলোতে ফোকাস করা এবং তারপর সেগুলোকে প্রযুক্তির সহযোগিতায় শৈল্পিক উপায়ে উপস্থাপন করা। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও একটা টার্গেট ছিল। যাতে তারা নিজেরাই তাদের গল্প তৈরি করতে পারে এবং টেলিভিশন চ্যানেলসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সবে ওইসব গল্প মানুষ দেখতে পায়।
পরিচালক মাশরাভি বলেন:
কখনও কখনও আমরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করতাম এবং জেগে থাকতাম। কারণ ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল, ইন্টারনেট কাজ করছিল, তাই আমরা আমাদের সেরা কন্টেন্টগুলো আপলোড করতে পারতাম। আমাদের শেষ চলচ্চিত্রটি ২ সপ্তাহ আগে এসেছে। ওই এলাকা থেকে ফিল্মগুলোকে বের করে নিয়ে আসা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার ছিল। বিদ্যুৎ না থাকলে কোনোভাবেই আমরা কাজটি করতে পারতাম না।
মাশরাভি বলেছেন: সম্পাদনার ক্ষেত্রে একটি কাজে ২২টি চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত করা বড় রকমের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ একই ক্যামেরা এবং একই সেটিংসে কেউই ছবি তোলে নি এবং শব্দের মানও ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
মাশরাভি বলেন: এরকম পরিস্থিতিতে সিনেমা নির্মাণের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে "দুঃখিত সিনেমা" শিরোনামের একটি শর্ট ফিল্মের কথা উল্লেখ করা যায়।
এই চলচ্চিত্রটির সাথে আমার একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কারণটা হলো আপনি হয়তো মনে করেন যে সিনেমা আপনার জীবনে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু পরক্ষণেই হঠাৎ আপনি দেখতে পান-না, এই ধারণা ঠিক নয়। বরং জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কিছু খাওয়া; আপনার পরিবারকে বাঁচানো এবং আপনি দেখতে পাবেন- সিনেমার চেয়ে মানুষকে বাঁচানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফিলিস্তিনি পরিচালক জোরালোভাবে বলেছেন:
জীবনকে আরও ভালো করতে, জীবনকে সহজ করতে, আরও বোধগম্য করতে আমরা সিনেমা তৈরি করি। এই ছবিতে সেসব উপাদান খুব ভালভাবে রয়েছে। কারণ পরিচালক এমন একটি পরিস্থিতিতে ছিলেন যেখানে তাকে জীবন এবং সিনেমার মধ্যে একটিকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। তিনি জীবনকেই বেছে নিয়েছেন।
সিনেমার ভূমিকাটা তাহলে কী? এমন এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন: সিনেমা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিন তথা ইসরাইল ভূখণ্ডে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। সিনেমাকে ইসরাইলি দখলদারিত্ব মোকাবেলায় রক্ষা করা উচিত। সিনেমা শুধুমাত্র একটি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত নয়, এটি একটি পদক্ষেপও হওয়া উচিত। আমরা ফিলিস্তিনিরা এক জাতি। আমাদের অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সঙ্গীত, রঙ, খাবার রয়েছে। আমাদের অনেক কিছু আছে যা আমাদের সকলের। এইসব উপাদান চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য শক্ত ভিত্তি হতে পারে।
উল্লেখ্য যে রশিদ মাশরাভি ১৯৬২ সালে গাজার ইয়াফা আশ্রয়শিবিরের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং "শেতি" শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠেন। তিনি রামাল্লায় বসবাস করেন এবং কাজ করেন। স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে "সিনেমা নির্মাণ ও প্রচার কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মোবাইল সিনেমা প্রোগ্রামের একজন স্পনসর হওয়ার সুবাদে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে চলচ্চিত্র দেখানোর সুযোগ পান।
তিনি ২০১৩ সালের টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে "প্যালেস্টাইন স্টেরিও" নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তারপর "ইয়ারমুকের চিঠি" এবং "বরফের উপর লেখা" ফিল্মগুলো তৈরি করেন। ১৯৯৫ সালে "হাইফা", ২০০৫ সালে "ওয়েটিং" এবং ২০০২ সালে নির্মিত ডকুমেন্টারি "লাইভ ফ্রম প্যালেস্টাইন" তার অন্যান্য চলচ্চিত্র। এই পরিচালক ২০১৮ সালে ৩৬ তম ফাজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।#