এ সময় ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত নয় মাসে ইহুদিবাদীরা গাজায় নৃশংস অপরাধযজ্ঞ চালিয়েও পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে নিতে পারেনি। পার্সটুডে এসব তথ্য জানিয়েছে। ইরানি মন্ত্রী বলেন,
ইসরাইল যত বেশি উত্তেজনা ছড়াবে এবং অপরাধযজ্ঞ চালাবে তত বেশি তারা মারাত্মক ঝুঁকি ও বিপদের মধ্যে পড়বে। এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাকেরি কানি বলেন, ৭ অক্টোবরের আগে ইরাক বা ইয়েমেন থেকে ইসরাইলের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ৭ অক্টোবরের পরে তা হয়েছে। ৭ অক্টোবরের আগে ইরান অবৈধ ইসরাইলের ভেতরে কখনো হামলা চালায়নি, কিন্তু ৭ অক্টোবরের পরে এই ঘটনা ঘটেছে। ইহুদিবাদীরা দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইরানি কমান্ডারকে শহীদ করার পর তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। কাজেই গত ৯ মাসে ইহুদিবাদীদের অপরাধযজ্ঞ যত বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে হুমকিগুলো তত বেশি বাস্তব রূপ লাভ করেছে।
লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনোই এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির পক্ষে নয়। সিএনএনের প্রশ্নের জবাবে আলী বাকেরি বলেন,
অন্যত্র সংঘাত ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাটা কৌশলগত ত্রুটি। এর ফলে ইহুদিবাদী ইসরাইল লাভবান হতে পারবে না বরং তারা আরও মারাত্মক বিপদে পড়বে।
ফিলিস্তিনে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান ইস্যুতে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান সিএনএনের উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া। তার প্রশ্নের উত্তরে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বলেন,
কেবল ফিলিস্তিনের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। তিনি বলেন, ইরানের প্রস্তাব হলো ফিলিস্তিনি জনগণের অংশগ্রহণে একটি গণভোট আয়োজন করা; যারা এখন দখলকৃত ভূখণ্ডের ভেতরে আছে এবং যারা ইহুদিবাদীদের চাপের কারণে অধিকৃত অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে তারা সবাই এই গণভোটে অংশ নেবে। ফিলিস্তিনের মুসলিম, খ্রিস্টান বা ইহুদিরা এই গণভোটে অংশগ্রহণ করবে এবং তারাই দেশের ভবিষ্যৎ ও তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
আলী বাকেরি বলেন, ফিলিস্তিনের আসল মালিক ফিলিস্তিনিরা, কখনোই বহিরাগত ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মালিক হতে পারে না। তিনি বলেন, কেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস বা বিশ্বের অন্য কোথাও থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? অন্যদেরকে এমন অধিকার কে দিয়েছে? ফিলিস্তিনি জনগণ কি নিউইয়র্কে বসে তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কাউকে দিয়েছে? কেন আমরা ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দিচ্ছি না?
ইরান যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটাই সবচেয়ে যৌক্তিক, গণতান্ত্রিক এবং স্থিতিশীল সমাধান বলে মন্তব্য করেন ইরানের এই মন্ত্রী।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যা-প্রচেষ্টায় ইরানের জড়িত থাকার অভিযোগ এবং জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে আলী বাকেরি বলেন,
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার অধিকার নিশ্চিত করতে এবং জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে এবং এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হবে।
পরমাণু সমঝোতা 'জেসিপিওএ' সম্পর্কে তিনি বলেন,
ইরান ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা জেসিপিওএ সই করেছিল কিন্তু আমেরিকা এই চুক্তি থেকে সরে গেছে এবং চুক্তির ক্ষতি করেছে। ইরান এখনও ২০১৫ সালেরই সেই চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী যে ফতোয়া দিয়েছেন সে প্রসঙ্গেও জানতে চান সিএনএনের উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া। এ প্রসঙ্গে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। তাঁর আদেশ এবং ফতোয়া মেনে চলা রাষ্ট্রের সব বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ এটা লঙ্ঘন করতে পারে না এবং লঙ্ঘন করবেও না।
এই সাক্ষাতকারে ইরান-সৌদি সম্পর্ক এবং সৌদি আরবের যুবরাজের ইরান সফরের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,
দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সফরের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং এই বিষয়টি দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিতে রয়েছে।#