অথচ ইহুদিবাদী ইসরাইল এখন বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযানে জড়িত হিসেবে নিন্দিত।
এ প্রসঙ্গে লেবাননে নিযুক্ত ইরানি দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব বেহনাম খসরুয়ি লিখেছেন, প্রায় এক মাস পর শুরু হচ্ছে প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪। ফরাসি সশস্ত্র-বাহিনী ৪৬টিরও বেশি সদস্য দেশের সেনা নিয়ে গড়েছে এ প্রতিযোগিতার নিরাপত্তা রক্ষার জোট। কিন্তু ফরাসি সরকারের নিরাপত্তার বাইরেও ইসরাইল তার খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা রক্ষায় একদল বিশেষ কমান্ডো পাঠাচ্ছে, এরা প্রতিযোগিতা চলার সময় ইসরাইলি খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা দেখবে।
যে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনী গত নয় মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় ৩৮ হাজারেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করেছে অলিম্পিকের নিরাপত্তায় তাদের উপস্থিতি বিস্ময়কর। অলিম্পিকের মূল উদ্দেশ্য হল মানবাধিকার, শান্তি ও বৈষম্যহীন জীবন-যাপনকে রক্ষা করা। তাই এখানে ইসরাইলি উপস্থিতিই এক বিশাল পরস্পর-বিরোধিতা বা বৈপরীত্য। এ বিষয়টি কি অলিম্পিকের চেতনা ও নৈতিকতার লঙ্ঘন নয়?
অলিম্পিকের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রথম এই বহুজাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ সনে। জীবনকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখা ও গঠনমূলক প্রতিযোগিতাই ছিল এর লক্ষ্য। গ্রিসের রাজারা এই সময় যুদ্ধ বন্ধ রাখতেন। মানবসমাজ এভাবে শান্তিকামিতার দিকে এগুতে চেয়েছে।
আধুনিক যুগেও সেই একই লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে অলিম্পিক। জাতিগত বৈচিত্র্যের মাঝে শান্তি ও মানব-প্রেম এর অবিচ্ছেদ্য বার্তা। অলিম্পিক পল্লীগুলো যেন এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আদর্শ বিশ্ব-রাষ্ট্রের সোপান। যুদ্ধ, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অলিম্পিক হতে পারে বৈশ্বিক জাগরণের ও বিবেকের অনির্বাণ প্রতীক।
বহুজাতিক একটি নিরাপত্তা কোম্পানির মাধ্যমে ইসরাইল প্যারিস অলিম্পিকের নিরাপত্তায় পরোক্ষভাবে জড়িত হয়েছে বলে খবর এসেছে। এই অলিম্পিকের নিরাপত্তায় (ISDS) আইএসডিএস নামের এই কোম্পানি ও ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতির সম্ভাবনা শান্তিকামিতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইএসডিএস গোটা অলিম্পিকের নিরাপত্তার বিষয়াদি পরিচালনা করবে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি ইসরাইলেরই একটি প্রাইভেট নিরাপত্তা কোম্পানি। এর প্রধান লুভ গালসার ইসরাইলের সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের বৈষম্য ও অবিচার এত ব্যাপক এবং প্রকট যে মুক্তবুদ্ধির অধিকারী সবাই ইসরাইলকে বর্ণবাদী বলে অভিহিত করছেন। গাজার স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, বাজার ও হাসপাতাল কিছুই বাদ যাচ্ছে না ইসরাইলের নির্বিচার বোমা বর্ষণ থেকে। পানি, ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি জ্বালানি পৌঁছতে দিচ্ছে না ইসরাইল গাজায়। তাই বিশ্ব-অলিম্পিকে ইসরাইলের উপস্থিতি মানবাধিকারের প্রতি বড় ধরনের উপহাস। এই অলিম্পিকের নিরাপত্তায় (ISDS) আইএসডিএস-কে স্থান দেয়া মানে ইসরাইলি নৃশংসতা ও পৈশাচিকতাকে পুরস্কার দিয়ে তার ঔদ্ধত্য ও দম্ভকে আরও প্রশ্রয় দেয়া এবং ইসরাইলকে নিরপরাধ বলে সার্টিফিকেট দেয়া। আসলে ফ্রান্স এভাবে নিজেই ইসরাইলের অপরাধের বড় সহযোগী হিসেবে মানবাধিকারের শত্রু হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে নিন্দিত হবে। #