আবনা ডেস্ক:
হে আল্লাহ, আপনার করুণা ও দয়ার ছায়ায় তাঁর (সা.) স্থানকে প্রশস্ত করে দিন; আর তাঁকে (সা.) আপনার অনুগ্রহ থেকে অশেষ পুণ্য ও কল্যাণ দান করুন। হে আল্লাহ, তাঁর স্থাপনা ও ইমারতকে সকল নির্মাতার স্থাপনা ও ইমারতের চেয়ে উচ্চ করে দিন। আপনার কাছে তাঁর মর্যাদা ও স্থানকে উচ্চ ও সম্মানিত করে দিন। তাঁর আলোকে তাঁর জন্য পরিপূর্ণ করে দিন, তাঁকে মানব জাতির কাছে নবুওয়াত ও রিসালত সহকারে আপনার পক্ষ থেকে প্রেরণ করার জন্য তাঁর সাক্ষ্য কবুল এবং তাঁর কথায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাঁকে পুরস্কৃত করুন। কারণ তাঁর কথা ন্যায়ভিত্তিক এবং তাঁর ফয়সালা ও রায় সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত। হে আল্লাহ, আমাদেরকে ও তাঁকে জীবনের (নির্মল) আনন্দ, চিরস্থায়ী নিয়ামত, আশা-আকাঙ্ক্ষায় সন্তুষ্টি প্রকাশ, অনাবিল আনন্দ উপভোগ, চিত্তের প্রশান্তি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্মানের উপঢৌকনাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একত্রে রাখুন।
খুতবা ৭৭ থেকে
বনু উমাইয়্যা আমাকে অল্প অল্প করে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরাধিকারের ওপর অগ্রাধিকার প্রদান করছে; আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যদি জীবিত থাকি তাহলে কসাই যেমন বালু-মাখা মাংস থেকে বালু ঝেড়ে ফেলে ঠিক তেমনি আমি তাদেরকে ঝেড়ে ফেলব (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান করব, দূরে তাড়িয়ে দেব এবং তাদের থেকে হযরত মুহাম্মদ [সাঃ]-এর উত্তরাধিকারকে পৃথক করব)।
খুতবা ৮৯ থেকে
মহান আল্লাহ তাঁকে [হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে] রাসূলদের তিরোধানের বেশ কিছু সময়ের ব্যবধানে (এ পৃথিবীতে) প্রেরণ করেছেন। তখন জাতিসমূহ (অসচেতনতার) গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিল। ফিতনাসমূহ স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল এবং মানব জাতির সার্বিক বিষয়াদি ছিল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত। যুদ্ধের লেলিহান শিখা (পৃথিবীর সর্বত্র) প্রজ্জ্বলিত ছিল। পৃথিবীর জীবনপত্র তখন হলুদ হয়ে গিয়েছিল, এর ফলবান হওয়ার কোন আশাই ছিল না এবং এর সকল (প্রাণ সঞ্জীবনী) জলধারাও নিঃশেষ ও শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে পৃথিবী তখন (হেদায়েতের) আলোকে ঢেকে রেখেছিল এবং প্রকাশ্যে প্রবঞ্চনা দিচ্ছিল। তখন হেদায়েতের (সুপথ-প্রাপ্তির) সুউচ্চ মিনার পুরানো ও জীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। আর পথভ্রষ্টতার চিহ্ন ও নিদর্শনসমূহ প্রকাশ্যে বিরাজমান ছিল। পৃথিবী তখন নিজ অধিবাসীদেরকে কুৎসিত চেহারা সহকারে বরণ করত এবং এর সন্ধানকারীদের প্রতি তীব্র ভ্রুকুটি করত। তখন ফিতনাই ছিল পৃথিবীর একমাত্র ফল এবং মৃত লাশই ছিল এর (অধিবাসীদের) খাদ্য [আসলে এখানে হযরত আলী (আ.) তীব্র খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ ও সংকটের কারণে আরব জাতি যে মৃত পশু ভক্ষণ করত সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।] আর ভয়-ভীতি পৃথিবীর (পার্থিব জীবনের) অন্তর্বাস ও তরবারি এর উর্ধ্ববরণ ও চাদরে পরিণত হয়েছিল। (অর্থাৎ ভয়-ভীতি, ত্রাস, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি, রক্তপাত ও অশান্তি তখনকার পৃথিবী ও পার্থিব জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ও অবিচ্ছেদ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কাপড় যেমন দেহের সাথে লেগে থাকে ঠিক তেমনি ভয়-ভীতি যেন জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল। আর উর্ধ্ববরণ ও চাদরের মত তরবারি তখনকার পার্থিব জীবনের উর্ধ্ববরণী পোশাকে পরিণত হয়েছিল।)
খুতবা ৯৪ থেকে
মহান আল্লাহর অসীম করুণা ও দয়া হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে পৌঁছালো ও সর্বোৎকৃষ্ট খনি (বংশ) এবং সবচেয়ে সম্মানিত উৎসমূল থেকে অর্থাৎ বৃক্ষবৎ পবিত্র বংশধারা যা থেকে তিনি মহান নবীদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর পবিত্র আমানতের সংরক্ষণকারী বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনীত করেছেন তা থেকেই তাঁকে বের করলেন। তাঁর বংশধরগণ (ইতরাত) সর্বশ্রেষ্ঠ বংশধারা যা (মহান আল্লাহর) সংরক্ষিত পবিত্র স্থানে জন্মেছে এবং বদান্যতা ও পবিত্রতায় যা সুউচ্চ হয়েছে। বৃক্ষবৎ এই পবিত্র বংশধারার রয়েছে বহু দীর্ঘ-প্রশস্ত ডাল-পালা ও শাখা-প্রশাখা এবং এমন একটি ফল যা ধরা যায় না। তাই তিনি মুত্তাকীদের নেতা (ইমাম) এবং যারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের চোখের দ্যুতি। তিনি এমন এক প্রদীপ যার দ্যুতি ও প্রভাব প্রকাশিত (প্রকাশ্যে বিরাজমান) এবং উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক যার আলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিস্তার লাভ করেছে। তিনি সর্বোৎকৃষ্ট (চন্দন) কাঠসদৃশ, আগুনের সংস্পর্শে আসলেই যার প্রভাব ও দ্যুতির চমকানিতে সব কিছু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাঁর সিরাত অর্থাৎ জীবন যাপন পদ্ধতি ও অভ্যাস মধ্যপন্থা ও সরল সঠিক পথ। তাঁর সুন্নাহ্ই (আদর্শ) সুপথ প্রাপ্তি। তাঁর বাণী স্পষ্ট মীমাংসাকারী। তাঁর বিচারই ন্যায়পরায়ণতা (আদল)। মহান আল্লাহ তাঁকে রাসূলদের বিদায়ের বেশ কিছুকাল পরে সৎ কাজ (পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সুন্নাহ্) থেকে জাতিসমূহ যখন বিমুখ ও অজ্ঞ ছিল ঠিক তখনই প্রেরণ করেন।
খুতবা ৯৫
এ খুতবায় হযরত আলী (আ.) মহানবীর মহৎ গুণাবলী উল্লেখ করেছেন
মহান আল্লাহ এমন এক সময় মহানবী (সা.)-কে প্রেরণ করেছিলেন যখন সমগ্র মানব জাতি উত্তেজনা ও জটিলতার মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল এবং ফিতনার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছিল। প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা বিবেক-বুদ্ধি লোপ করে দিচ্ছিল এবং অহংকার ও গর্ব তাদেরকে পদস্খলিত করেছিল। চরম অজ্ঞতা ও মূর্খতা তাদেরকে নির্বোধ ও হীন করে ফেলেছিল। তখন লোকেরা বিশৃঙ্খলা ও অজ্ঞতার অমানিশায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও হয়রান হয়ে পড়েছিল। এরপর মহানবী মানব জাতিকে সদুপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে (পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে) যথাসাধ্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করলেন। তিনি নিজে সৎ পথের ওপর অবিচল থেকে (মানব জাতিকে) প্রজ্ঞা, সদুপদেশ ও সুপরামর্শের দিকে আহবান জানালেন।
খুতবা ৯৬ থেকে
তাঁর (মহানবীর) বাসস্থান ও আবাসস্থল সর্বোত্তম বাসস্থান ও আবাসস্থল। যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদার খনি এবং নিরাপত্তার ক্রোড়সমূহের মধ্যে তাঁর উৎসমূলই শ্রেষ্ঠ। পুণ্যবানদের হৃদয় তাঁর দিকেই ঝুঁকেছে এবং (মানব জাতির) দৃষ্টি তাঁর দিকেই নিবদ্ধ হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর দ্বারা সকল হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা দাফন করেছেন এবং (সকল) পারস্পরিক শত্রুতা ও জিঘাংসার বহ্নিশিখা নির্বাপিত করেছেন। তাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে ভ্রাতৃসুলভ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন এবং যারা (কুফরী ও খোদাদ্রোহিতায়) ঐক্যবদ্ধ ছিল তাদেরকে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন করেছেন। যারা অসম্মানিত, অপদস্থ ছিল মহান আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করেছেন এবং (মিথ্যা) গৌরব ও সম্মানকে অপদস্থ ও হেয় করেছেন। তাঁর বাণী ও কথা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ এবং তাঁর মৌনতা ও নীরবতা গভীর তাৎপর্যমণ্ডিত বাণীসম।
মূল আরবী থেকে মোঃ মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত
(চলবে...)