‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

৫ ডিসেম্বর ২০২৪

৩:১২:৩১ PM
1511205

সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কোন কোন সরকার সমর্থন দিচ্ছে?

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, সিরিয়ায় তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকার এমনকি মার্কিন সরকারের মধ্যেও সম্পূর্ণ সমন্বয় রয়েছে।

লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর কয়েকটি দেশের সমর্থনে এবং নতুন বিদেশি বাহিনীর আগমনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর অবস্থানে ব্যাপক হামলা চালায়।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, বিদেশি পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের উত্থান, সন্ত্রাসীদের মধ্যে ইউক্রেনের ভাড়াটে সৈন্যদের উপস্থিতি,সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা প্রদেশের বেশ কিছু এলাকা মুক্ত করা এবং সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে টেলিফোনালাপ এবং সিরিয়ায় ১০০ সন্ত্রাসী হত্যা সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পার্সটুডে আজকের নিবন্ধ ছেপেছে।

সিরিয়াকে কেন্দ্র করে পুতিন ও পেজেশকিয়ানের মধ্যে ফোনালাপ

সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনালাপে ইরান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তর সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের সাম্প্রতিক হামলা এবং গতিবিধিকে এই দেশ ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফোনালাপে দুই পক্ষই সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মোকাবেলায় দেশটির সরকারকে সাহায্য করার জন্য যৌথ সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছে।

আরাকচি: সিরিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইল ও আমেরিকার মধ্যে সম্পূর্ণ সমন্বয় রয়েছে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি সোমবার রাতে সিরিয়া ও তুরস্কে তার সাম্প্রতিক আঞ্চলিক সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সিরিয়ার সরকারের কাছে আমি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পূর্ণ ও সিদ্ধান্তমূলক সমর্থনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।

সিরিয়ায় ইহুদিবাদী সরকার, আমেরিকা এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সম্পূর্ণ সমন্বয় রয়েছে উল্লেখ করে আরাকচি বলেছেন, "আরোপিত যুদ্ধের সময় সিরিয়া সরকার যেমন আমাদের সাথে ছিল,আমরাও এই দেশের সঙ্গে থাকব।" দামেস্কে ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরী সোমবার রাতে জোর দিয়ে বলেছেন যে ইরান-সিরিয়া সম্পর্ক অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং দুই দেশ কঠিন পরিস্থিতিতে একে অপরকে রক্ষা করবে।

আতওয়ান: সিরিয়ায় আমেরিকা,ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং তুরস্কের ত্রিমুখী পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে

এ প্রসঙ্গে আরব বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্লেষক "আব্দুলবারী আতওয়ান" রাই আল-ইয়ুমের একটি প্রবন্ধে সিরিয়ায় আমেরিকা,ইহুদিবাদী শাসক ইসরাইল ও তুরস্কের ত্রিমুখী প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেছেন,"সিরিয়ায় এখন যা ঘটছে তা সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি যা আমেরিকা ১৯৯১ সালে ইরাকে সংঘঠিত করেছিল। কিন্তু সিরিয়ার পরিস্থিতি ইরাকের মতো নয়। সিরিয়া এমন একটি দেশ যার একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং রাশিয়ার মত একটি কৌশলগত মিত্র রয়েছে,ইরানের নেতৃত্বে একটি প্রতিরোধ অক্ষ রয়েছে।

ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের মিডিয়া প্রধান মুহান্নাদ আল-আকাবি ও মঙ্গলবার ভোরে বলেছেন, "সিরিয়ার সন্ত্রাসীরা বিদেশী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে এবং তাদের লক্ষ্য হল এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করা।"

এক বিবৃতিতে তিউনিসিয়ার পপুলার ফ্লো পার্টি সিরিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে "নতুন মধ্যপ্রাচ্য" হিসাবে পরিচিত ইহুদিবাদী শাসকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি পদক্ষেপ হিসাবে মূল্যায়ন করেছে। এই বিবৃতিতে,তিউনিসিয়ার পপুলার মুভমেন্ট পার্টি জোর দিয়ে বলেছে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো কেবলমাত্র ই্হুদিবাদী এবং আমেরিকান সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করছে।

আল-আলমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার তুরস্কের দূতাবাসের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে যেখানে সিরিয়ায় তাকফিরি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি ইহুদিবাদী শাসক, আমেরিকা ও তুরস্কের সমর্থনের নিন্দা করা হয়।

তেহরানে বসবাসরত একজন সিরীয় নাগরিক এই সমাবেশে ইরানের আরবি ভাষার টিভি চ্যানেল আল-আলমের প্রতিবেদককে বলেছেন, তুরস্ক সম্প্রতি এই অঞ্চলে সন্দেহজনক তৎপরতা শুরু করেছে এবং প্রমাণ রয়েছে যে তারা সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে দেশটি সমর্থন দিচ্ছে। এদিকে, সিরিয়ার সূত্রের বরাত দিয়ে আল-মায়াদিন নিউজ চ্যানেল মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে,হায়াত তাহরির আল-শাম সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ইউক্রেনের সেনারা সিরিয়ায় উপস্থিত রয়েছে।

কিয়েভ পোস্ট ওয়েবসাইট ঘোষণা করেছে যে উত্তর সিরিয়ায় সক্রিয় তাহরির আল-শাম সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা পরিষেবার সাথে সম্পর্কিত বাহিনী খিমিক গ্রুপ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা ইউক্রেনে ড্রোন ব্যবহারের ওপর একটি বিশেষ প্রশিক্ষণও লাভ করেছে।

আল-আলমের প্রতিবেদন অনুসারে সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইরান-সিরিয়া সামরিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহযোগিতা চুক্তির অংশ হিসাবে ইরানের সামরিক উপদেষ্টাদের একটি দল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পৌঁছেছে।

প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্রও আল-মায়াদিনের সঙ্গে একটি টেলিফোনালাপে নিশ্চিত করেছে যে হামার উত্তর ও পূর্ব এবং আলেপ্পোর দক্ষিণে ফ্রন্টগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম এবং সাহায্য পাঠানো হয়েছে।

আল-মায়াদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওই সূত্রটি বলেছে যে এই সাহায্যের মধ্যে রয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং সরঞ্জাম যা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার মোকাবেলায় শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছে।

সিরিয়ায় ১০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে

এদিকে,সিরিয়ার রাশিয়ান সেন্টার ফর রিকনসিলিয়েশন সোমবার রাতে ঘোষণা করেছে যে সিরিয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ১০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সোমবার আল-আলম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকদিন ধরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার পর সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর মৃতের সংখ্যা ১৪০০ জনে পৌঁছেছে।

সংবাদ সূত্র আরো জানায় যে সিরিয়ার সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও তাকফিরি গোষ্ঠীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের পর পশ্চিম সিরিয়ার হামার উত্তর-পূর্ব উপকণ্ঠে আল-রাহজান এবং আল-সান গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। এসব সূত্রে জানা গেছে,সিরিয়ার সেনাবাহিনী উত্তর সিরিয়ার আলেপ্পোর পূর্বে আল-সাফিরা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ‘উম্ম আমুদ’ এলাকাটিকে সন্ত্রাসীদের দখল থেকে মুক্ত করেছে। আল-মায়াদিননেটওয়ার্ক মঙ্গলবার সকালে আল-সাফিরার দিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অগ্রগতির ঘোষণা করেছে এবং উল্লেখ করেছে যে এই অগ্রগতির অর্থ হল আলেপ্পো প্রদেশের গ্রামগুলোর গভীরে সিরিয়ান বাহিনীর দ্রুত ফিরে আসা।#