২৯ জুলাই ২০২৫ - ২৩:০৫
ফ্রান্সের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত: বাস্তবতা নাকি প্রতীকী ঘোষণা

গাজায় পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি বাস্তবসম্মত নাকি কেবল প্রতীকী—বিভিন্ন মহলে এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): পার্স টুডে প্রতিবেদন অনুসারে: গাজায় পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি বাস্তবসম্মত নাকি কেবল প্রতীকী—বিভিন্ন মহলে এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে।


এখন পর্যন্ত, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি ফরাসি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

ইরানের মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোরন এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘মানবিক দুর্ভোগের অবসান’ এবং ‘দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান পুনরুজ্জীবন’-এর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরের কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন জানানোর উদ্দেশ্যে নয়।

ফ্রান্সের সিদ্ধান্তে দুটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট:

প্রথম দৃশ্যপট: কৌশলগত ও বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত:

ফ্রান্স কূটনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের স্পষ্ট বিরোধিতার মুখে দাঁড়িয়ে শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিতে চাইছে। যদি স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম এমনকি জার্মানির মতো অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এই পথ অনুসরণ করে, তাহলে প্যারিসের এই সিদ্ধান্ত দুই রাষ্ট্রের সমাধানের ভিত্তিতে একটি নতুন ইউরোপীয় ঐক্য গঠনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

দ্বিতীয় দৃশ্যপট: প্রতীকী কূটনৈতিক শোডাউন:

তবে আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা হচ্ছে, ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি প্রতীকী পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে তাদের অবস্থান ও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কৌশল।

সমালোচকরা বলছেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও, ইসরাইলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ, গাজা পুনর্গঠনে সম্পদ সরবরাহ বা ফিলিস্তিনি শাসন কাঠামোকে আইনি সহায়তা দেওয়ার মতো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা দেখায়নি।

এই দৃশ্যপটে, প্যারিসের এই পদক্ষেপ মুসলিম বিশ্বে ইউরোপের ক্ষয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমালোচনার জবাব দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র—যার ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য বা দখলদারিত্বের বাস্তব পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। এমনকি যদি জাতিসংঘের পর্যায়ে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তবুও যতদিন না অবরোধ, ভূমি ও সীমানার সার্বভৌমত্বের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, ততদিন এই পদক্ষেপ একটি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির চেয়ে বেশি কিছু হবে না—এটি হবে কেবল একটি প্রতীকী ঘোষণা, যার কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই।

এই দৃশ্যপট অনুযায়ী, ফ্রান্স ইতোপূর্বেও বহুবার ফিলিস্তিনের প্রতি মৌখিক সমর্থন জানিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বা আনুষ্ঠানিক অবস্থান থেকে পিছিয়ে গেছে।

এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো- ২০১৪ সালেই ফরাসি জাতীয় সংসদ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি অনাবশ্যক প্রস্তাব পাস করেছিল, কিন্তু সেই সময় সরকার ‘উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি’ এই যুক্তিতে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি।

২০১৬ সালেও ফ্রান্স ফিলিস্তিন নিয়ে দুটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, কিন্তু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি পক্ষের অনুপস্থিতিতে এবং কার্যকর কোনো রূপরেখা ছাড়া, সেগুলোও ব্যর্থ হয়েছিল।

এই অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেকেই মনে করছেন, ফ্রান্সের বর্তমান সিদ্ধান্ত আসলে তাদের আগের প্রতীকী ও নিষ্ক্রিয় নীতিরই পুনরাবৃত্তি—একটি বাস্তব পরিবর্তনের সূচক নয়।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha