১৫ আগস্ট ২০২৫ - ১০:০৭
ইরানের পানি সংকটে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অভিনয়ে

যেখানে গাজার শিশুরা মারা যাচ্ছে ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, সেখানে নেতানিয়াহু ব্যস্ত রাজনৈতিক অভিনয়ে

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): পানি সংকট থেকে ইরানের মানুষকে রক্ষার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেকে 'মানবতার রক্ষাকর্তা' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, অথচ গাজার শিশুরা পানি সংকট ও দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যাচ্ছে।


নেতানিয়াহু সম্প্রতি খরা মোকাবেলায় ইসরায়েলের বিশেষ দক্ষতার দাবি করে ইরানি জনগণের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছে, যেখানে নেতানিয়াহু নিজেকে ইরানের মানুষের রক্ষাকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন এবং সংখ্যক মানুষের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

অথচ মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে, গাজার শিশুরা পানি সংকটের কারণে মারা যাচ্ছে। এটি সেই সরকারের কাজ, যারা ইরানের মানুষকে রক্ষা করার দাবি করে, অথচ গাজার পানি চরমভাবে বন্ধ করেছে এবং সেখানে মানুষের জন্য জীবনযাত্রার শর্তগুলো বিপর্যস্ত করেছে।

নেতানিয়াহুর এই দাবিগুলো বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু নয়। ইসরায়েলের নীতি অনুযায়ীই গাজার পানি সরবরাহ অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যা সরাসরি বেসামরিকদের জীবনহানির কারণ।

যখন নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই ৭০ কিলোমিটার দূরে গাজার শিশুরা শুষ্ক ঠোঁট নিয়ে তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছিল, কারণ সেই সরকারই তাদের পানি সরবরাহ নষ্ট করেছে।


গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরোধের কারণে পানি ও খাদ্য সংকট সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ৩১৫ জনের জীবন নিয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি শিশুদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বিশেষ করে অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে এই পরিস্থিতি মারাত্মক।

সেখানে প্রত্যেক মানুষের জন্য পানির গড় পরিমাণ দিনে তিন লিটারের কম, যা বেঁচে থাকার ন্যূনতম মানের এক-পঞ্চমাংশ মাত্র।

ইরানি জনগণের উদ্দেশে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের দুই দিন পরে ইসরায়েলের প্রাক্তন যুদ্ধমন্ত্রী সম্পূর্ণ গাজা অবরোধের ঘোষণা দেন এবং পানির সরবরাহ বন্ধ করার কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এটিকে "যুদ্ধাপরাধ" বলে চিহ্নিত করেছেন, কারণ আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক জনগণের জীবনধারণের মৌলিক অবকাঠামো ধ্বংস নিষিদ্ধ।

এই অবস্থায় গাজার শিশুদের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে পাচনতন্ত্র সংক্রান্ত রোগের ৪৫% বৃদ্ধি এবং পানি সংক্রান্ত অসুস্থতার কারণে নবজাতকের মৃত্যু, এই অঞ্চলের জীবনের কষ্টকর বাস্তবতা।

মেয়েটি মরিয়ামের মতো দুঃখজনক কাহিনী, যে মাত্র ছয় বছর বয়সে দূষিত পানি পান করার কারণে মারা গেছে, গাজার মানবিক বিপর্যয়ের একটি প্রতিফলন।

এই পরিস্থিতি কেবল গাজার মানবিক সংকটই প্রকাশ করছে না, বরং স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের নীতি ও ফিলিস্তিনির প্রতি আচরণকে চ্যালেঞ্জ করছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha